আজ বিশ্ব মা দিবস
মাকে ভালোবাসি বলার দিন
শিপন হাবীব
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রেজেকা বেগম ছয় মাস বয়সি শিশুকে পাশে শুইয়ে রেখে সেলাই করছেন নকশিকাঁথা। সবচেয়ে সুরক্ষা ও নিরাপদ স্থান মায়ের কোল। সন্তানের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় অবনত হওয়ার দিন মা দিবস। শনিবার রংপুর নগরীর সিলিমপুরে -উদয় চন্দ্র বর্মণ
আজ বিশ্ব মা দিবস। মাকে জড়িয়ে ধরা-ভালোবাসি বলার বিশেষ দিন। আজ কেউ মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, কেউ আবার মাকে জড়িয়ে আনন্দে কেঁদে উঠবে। সন্তানদের ভাষ্য, মা থাকাটাই পূর্ণতা। না থাকাটা শূন্যতা। যে শূন্যতা পূরণ হয় না।
মা আছেন, এর চেয়ে নিয়াতম আর কিছুই হতে পারে না। কেউ আবার বলে, মাকে ভালোবাসা-জড়িয়ে ধরার নির্দিষ্ট দিন হয় নাকি? প্রতিদিনই তো মা দিবস। কেউ আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন-মনে করে দেখুন, শেষ কবে-কখন মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, মা তোমায় ভালোবাসি। আনন্দে চোখের জল ফেলেছেন?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ শুধুই মায়ের ছবি। মাকে নতুন কাপড় পরিয়ে ছবি পোস্ট ভাসছে। কেউবা লিখছে, মা-হারা কষ্টের যন্ত্রণা। মা থাকার আনন্দ।
রাজধানীর বসুন্ধরার এক ব্যাংক কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের ভাষ্য, মা থাকাটাই সন্তানদের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। তার মা নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মায়ের কথা বলতেই দু’চোখের কোণায় পানি টলমল করছিল। ওই সময় যা বলার তার চোখ-মুখেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল-মা হারানোর শূন্যতা।
মা দিবস নিয়ে শনিবার কথা হচ্ছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিমের সঙ্গে। বলছিলেন, আমার কাছে মা-বাবা দিবস মানেই শূন্যতা। আমার মা-বাবা দুজনই মারা গেছেন। মা হচ্ছে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। মা-বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেও সন্তানের জন্য আশীর্বাদ-শ্রেষ্ঠ দান। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। এখন আমার সবই আছে, তবু আমায় শূন্যতা ঘিরে রাখে। মা-বাবার চেয়ে পূর্ণতা পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। আমি যখনই অসুস্থতা বোধ করি, অসহায়ত্ব বোধ করি, আমার মাকে স্মরণ করি। আমি দেখতে পাই, মা আমার মাথায় হাত রেখে আছেন।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে মাছ বিক্রি করছিলেন হান্নান মিয়া। মা দিবস বিষয়ে জানতে চাইলে বললেন, মাছ বিক্রি করে কালো আঙুর, গরুর তিল্লি কিনে নিতাম। গত বছর মা মারা গেছেন। আমি এখন ফল আর মাংস খাই না। মায়ের জন্য কাঁদি, পাই না।
মায়ের হাতে মার খেয়েছি বলেই মানুষ হতে পেরেছি-বলছিলেন ব্যাংকার রোকসানা আক্তার জলি। মা দিবসে মায়ের জন্য নতুন কাপড়, ব্যায়ামের মেশিন কিনেছেন তিনি।
মায়ের ছোঁয়া কী জিনিস-যিনি পাচ্ছেন তিনিই বোঝেন, কী মধুর! কী মায়া সেই ছোঁয়ায়! যমুনা ফিউচার পার্কের একটি ফ্যাশন হাউজে চাকরি করেন জান্নাত মিতু। বলছিলেন, মায়ের জন্য সোনালি পাড়ের কাপড় কিনে রেখেছেন। নতুন জুতা, চশমা, চুড়ি, একটি বোরকা কিনেছেন। নিজে অন্তঃসত্ত্বা, মা হবেন। মায়ের কষ্ট বোঝেন। বলতেই চোখের জল গাল বেয়ে গড়াচ্ছিল। মিতুর মতে, একজন সন্তানের কাছে তার মা-ই ‘ভেরি ফার্স্ট হিরো’।
মা দিবসের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল ২-৩ দিন আগেই। শনিবার কমলাপুর স্টেশনে কথা হয় চট্টগ্রামগামী যাত্রী আজিজুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে। জানালেন, মায়ের বয়স প্রায় ৯০ বছর। মা দিবসে মায়ের সঙ্গেই থাকবেন। সঙ্গে নেয়া বড় সাইজের ডায়াপার প্যাকেট গালে লাগিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলছিলেন। আপনি কাঁদছেন? বললেন, মা বিছানায়, উঠতে কষ্ট হয়। বাড়িতে অনেকেই আছেন। সবাই মায়ের যত্ন নেয়। ডায়াপার পরিয়ে দেয়। আমার মনটা ওখানে পড়ে থাকে। চাকরিবাকরি না থাকলে মায়ের সঙ্গেই পড়ে থাকতাম।
ইতালি প্রবাসী মহসিন সুমন। বলছিলেন, মা দিবস আসে-যায়। প্রাণটা কাঁদে, কাছে পাই না। তার মতো, হাজারও প্রবাসী মাকে কাছে পান না। দিবসটিতে বারবার মাকে ফোন করেন। প্রায় সব ভাষায়ই ‘এম’ দিয়ে মা। বিশ্বের প্রায় সব ভাষায়ই মা শব্দটি লেখার আদ্যক্ষর ইংরেজি শব্দ ‘এম’। যেমন : বাংলায় মা, ইংরেজিতে মাদার।
পৃথিবীর সব থেকে মধুর ডাক হলো ‘মা’। আর এই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় মা দিবস। ১৯০৮ সালে প্রথম মা দিবস উদযাপন করেছিলেন আন্না জার্ভিস নামে এক ব্যক্তি। পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় নিজের মায়ের স্মৃতিরূপে এ বিশেষ দিনটি উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।
১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে।