Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মাগফিরাতের দশ দিন

প্রভুপ্রেমের সময় বয়ে যায়

Icon

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রভুপ্রেমের সময় বয়ে যায়

ফাইল ছবি

দেখতে দেখতে ১৮টি রোজা চলে গেছে। যারা রোজার মতো মূল্যবান নেয়ামত পেয়েও সুযোগ হেলায় নষ্ট করছে, তাদেরও গত ১৮টি দিন কেটেছে। আর যারা রমজানের আগে থেকেই ব্যাকুল-বেকারার হয়ে রোজার জন্য অপেক্ষা করেছে, গত ১৮ দিন সিয়াম, কিয়াম তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, সেহরি, ইফতার, দান-সদকায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে, তাদের দিনও অতিবাহিত হয়েছে। তবে এ দুই দলের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।

কূলে আছড়ে পড়ার আগে আর পরে ঢেউয়ের দৃশ্য কি একই থাকে? কখনো নয়। আছড়ে পড়ার আগে ঢেউয়ের গর্জনে বুকে কাঁপন ধরে। আর আছড়ে পড়ার পর ঢেউয়ের নীরব প্রস্থান হৃদয়ে হাহাকার তোলে। যে ঢেউ বুকে কাঁপন ধরিয়েছে, সে ঢেউই খাঁ খাঁ জাগিয়ে বুকের পাঁজর ভেঙেছে। ঢেউ কিন্তু একই। তেমনই যে রমজান রহমত, বরকত জান্নাতের দুয়ার খুলে দিয়েছে, মাস শেষে যারা রমজানের ঢেউয়ে সাঁতার কাটতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের জন্য চরম যন্ত্রণাদায়ক আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

একটি বিখ্যাত হাদিস থেকে জানা যায়, একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.) প্রসঙ্গ ছাড়াই আমিন আমিন বলছিলেন। সাহাবিরা জানতে চাইলেন এমনটি বলার রহস্য কী? রাসুল (সা.) বলেন, জিবরাইল অভিশাপ দিয়েছে, আমি আমিন বলেছি। জিবরাইল একটি বদদোয়া করেছিল, রমজানের মতো এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও যে হতভাগা নিজের গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না, তার জন্য ধ্বংস। আমি বললাম, আমিন। (সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৪১০।)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আফানাজআলুল মুসলিমিনা কাল মুজরিমিন। মা লাকুম কাইফা তাহকুমুন।’ হে মানুষ! যে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আর যে চলেছে বাঁধনহারা হয়ে, তাদের দুজনের সঙ্গে একই আচরণ করা হবে এটি তোমরা ভাবলে কীভাবে! বড়ই আশ্চর্য তোমাদের বিবেক-বিবেচনাবোধ!’ (সুরা কলম, আয়াত ৩৫-৩৬।)

আর ১২টি ঢেউ এখনো বাকি আছে। যা মিস হয়ে গেছে, তার জন্য আফসোস করো না। বরং আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করো, অন্তত আজ এ মুহূর্তে তোমার ঘুম ভেঙেছে। দোয়া করো, যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের ঘুম যেন আল্লাহ ভাঙিয়ে দেন। এখন ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ছে, শাওয়ালের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঢেউ মিলিয়ে যাবে। সে বড় করুণ দৃশ্য। মুমিনরা আনন্দমাখা আফসোস করবে, মুনাফিকরা করবে আফসোসমাখা আনন্দ। মুমিনরা বলবে, হায়! যদি খোদার মেহমান কুরআনের মাসটি আরও কিছুদিন থাকত তাহলে কতই না ভালো হতো। অন্যদিকে মুনাফিকরা বলবে, বিপদ কেটে গেছে, এখন থেকে আর লুকিয়ে আড়ালে আবডালে খেতে হবে না। কত ভালো হতো যদি কখনো এমন যন্ত্রণাদায়ক মাস না আসত!

আসুন সিদ্ধান্ত নিই, ঢেউয়ে আছড়ে পড়া আনন্দে শামিল হব নাকি বেদনায় মিলিয়ে যাওয়া কষ্টের নির্মমতা ভোগ করব! শেষ করার আগে মনে করিয়ে দিচ্ছি মাবুদের আয়াতখানি, ‘নিশ্চয়ই আমি তাকে পথনির্দেশনা দিয়েছি। এখন এটা তার ওপর নির্ভর করে সে কৃতজ্ঞ হবে, না অকৃতজ্ঞ হবে। আমি তো সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শিকল, বেড়ি ও গনগনে আগুন।’ (সুরা দাহর, আয়াত ৩-৪।)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম