Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাবেক এমপির অডিও ভাইরাল

রাত্রে ভোট অইয়া গ্যাছে এমপি হইয়া রইছে

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাত্রে ভোট অইয়া গ্যাছে এমপি হইয়া রইছে

দলের জন্য একের পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে চলেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বরিশালের কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার। মসজিদের জমি নিজের নামে নেওয়ার অভিযোগে মামলার আসামি এবং ছাত্রলীগ নেতার হাত-পা কাটার হুমকি দেওয়ার পর এবার তিনি বলেছেন রাতের ভোটে আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার কথা।

এ সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতারা। আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারেনি-এমন কথাও তিনি বলেছেন ওই অডিওতে। কেবল রাতের ভোটের কথাই নয়, আওয়ামী লীগ মানে তিনি ও তার বাবা এবং দল করতে হলে তার সার্টিফিকেট নিতে হবে-এরকম কথাও তাকে বলতে শোনা গেছে অডিও রেকর্ডে।

এ ধরনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতারা। তার বিরুদ্ধে সেখানে মানববন্ধনও হয়েছে। কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে মাহবুবকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান বক্তারা।

আলোচিত ওই অডিও রেকর্ড বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াতে শুরু করে। যেখানে শোনা যায় উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রুম্মান হোসেনের সাথে কথা বলছেন মাহবুব। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে দলের জন্য বিব্রতকর নানা বক্তব্যের পাশাপাশি হুমকি দিতেও শোনা যায় রুম্মানকে। যুগান্তরকে রুম্মান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালী-৪ আসনের বর্তমান এমপি মহিবুবুর রহমানের পক্ষে ফেসবুকে আমার আইডিতে একটি পোস্ট দিই। পোস্টে তার তথা বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের বর্ণনা ছিল। ফেসবুকে কেন এ পোস্ট দিলাম তাই নিয়ে বিকেলের পর আমার মোবাইলে ফোন দেন সাবেক এমপি মাহবুব। কথার শুরুতেই নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন তিনি। তখন কৌশলে আমি তার কথা রেকর্ড করি। তবে ওই অডিও রেকর্ড কী করে ছড়িয়ে পড়ল তা বলতে পারব না।

ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডে রুম্মানকে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এহানে আমি আর বাপ ছাড়া আর কেডা আওয়ামী লীগ? ৭০ বচ্ছরের মইধ্যে ৬০ বচ্ছরই আমার বাপে আর আমি দলের সবকিছু। আমি তো রাজাকারের পোলা না। মহিবের বাপে আছেলে রাজাকার। আমি কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি, এই জায়গায় দল করতে আইলে আমার কাছ দিয়া সার্টিফিকেট নেওয়া লাগবে। আমি সার্টিফিকেট না দেলে আওয়ামী লীগ অয় ক্যামনে?’ তিনি কথার শুরুতেই বর্তমান এমপির পক্ষে কেন ফেসবুকে পোস্ট দিল জানতে চাইলে জবাবে রুম্মন বলেন, ‘আপনি যখন এমপি ছিলেন তখন আপনার কথা বলেছি। এখন উনি এমপি, ওনার কথা বলছি। দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, ভোটে যিনি এমপি হয়েছেন তার পক্ষে থাকব, কাজ করব এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া ভালো লোক না হলে তো তাকে শেখ হাসিনা নমিনেশন দিতেন না।’ এর উত্তরে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘শেখ হাসিনা তারে নমিনেশন দেয় নাই। ভোটও দেয় নাই, রাত্রে ভোট অইয়া গেছে আর হে এমপি অইয়া রইছে।’ মাহবুবের এ কথার প্রতিবাদ করেন রুম্মান। ‘আমরা তো ভোট দিছি’ বলার পাশাপাশি দলের উপজেলা সভাপতি সাবেক এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী হয়ে এ জাতীয় কথা তার বলা সাজে কিনা সেই প্রশ্নও তাকে করেন তিনি। এরপর রুম্মানকে তার সাথে দেখা করতে বলেন মাহবুব। ডালবুগঞ্জ খাপড়াভাঙ্গা কোথায় তার (রুম্মান) বাড়ি তা খুঁজে বের করে দেখে নেওয়ার হমকিও দেন। অডিও রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি শেয়ার করেন। এ নিয়ে অনেকে নানা মন্তব্যও করেন। এমডি আশিকুর রহমান লেখেন, ‘আওয়ামী লীগকে সবাই বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করে।’ তায়েব মৃধা মন্তব্য করেন, ‘তাহার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।’ আবুল হোসাইন রায়হান লেখেন, ‘ব্যক্তিকে চাপে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বদনামে ফেলিয়েন না।’ আরিফুজ্জামান আরিফ লেখেন, ‘তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’

ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ড সম্পর্কে কলাপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পৌর মেয়র বিপুল হাওলাদার বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়েছি। সবাই ভোট দিয়েছে। অথচ (মাহবুব) তিনি যা বলেছেন তাতে মনে হয়, তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন সম্পর্কে যে মিথ্যা অভিযোগ করে তার পক্ষে বলেছেন তিনি। দলের আপামর কর্মী-সমর্থকরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দে চিঠি পাঠাব। কেন্দ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাহবুব তালুকদারকে প্রথমে যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো অফিসের টিএন্ডটির টেলিফোন থেকে ফোন দেওয়া হলে তিনি তা ধরেননি। পরে এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন থেকে কয়েকবার কল দেওয়া হলে প্রতিবারই তিনি কেটে দেন। সর্বশেষ তার মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম