ধর্মীয় পরিচয়ের দ্বন্দ্ব
তরুণের লাশ দুই মাস চমেক’র হিমাগারে
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে দুই মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণ মুসলমান নাকি হিন্দু ছিলেন এ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে লাশ এখনো দাফন করা যায়নি। সেই লাশ এখনো রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে। তবে সেই দ্বন্দ্বের এবার অবসান হচ্ছে। আগামী রোববার আদালতে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলেও ওই তরুণ মৃত্যুর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন এবং কুরআন শিক্ষা নিয়েছেন। এসব কিছুর পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে।
২৯ জানুয়ারি পটিয়ার মনসা বাদামতলে তেলবাহী লরির চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী আহমাদ (২৯)। আহমাদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তখন তার নাম ছিল রতন দাশ। মৃত্যুর পর আহমাদের মা সন্ধ্যা রানী দাশ দাবি করেছিলেন, রতন দাশ হিন্দু ছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। তাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে শেষকৃত্য চিতায় দাহ করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু নিহতের সহপাঠীদের দাবি, তিনি ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজারের একটি মাদ্রাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই তারা মুসলিম হিসাবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে তারা পটিয়া হাইওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় পুলিশ আদালতের শরণাপন্ন হয়।
৩০ জানুয়ারি পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৩ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশকে আদেশ দিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে আহমাদের লাশ চমেক হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু ১৩ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি হাইওয়ে থানা পুলিশ। সেদিন তারা সময়ের আবেদন করে। হাইওয়ে পুলিশের এই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করেন।
জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন আহমাদ। তার বাড়ি মীরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে। তার পিতার নাম মনোরঞ্জন দাশ ও মাতার নাম সন্ধ্যা রানী দাশ। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে রতন দাশ নাম পরিবর্তন করে আহমাদ নাম রাখেন তিনি। যার নোটারি নম্বর-১১০৫৪৪। আহমাদ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং একমাত্র সন্তান হওয়ায় মাকে নিয়ে তিনি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
পটিয়া হাইওয়ে থানার ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার যুগান্তরকে বলেন, ‘নিহত তরুণের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে তার গ্রামের বাড়ি ও শহরে যে এলাকায় অবস্থান করতেন সেখানে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। সেই তরুণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার, কুরআন শিক্ষা নেওয়ার এবং যাদের সঙ্গে নামাজ পড়তেন তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’