Logo
Logo
×

শেষ পাতা

স্বাগতম মাহে রমজান

গুনাহ মাফ হয় সিয়াম সাধনায়

Icon

মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান শফী

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গুনাহ মাফ হয় সিয়াম সাধনায়

হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়ামকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর, এই আশায় যে, তোমরা মুত্তাকি হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজিদে সিয়ামের বিধান আগের উম্মতগুলোর জন্যও পালনীয় ছিল বলে জানিয়েছেন। সিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলেই তা সব উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। তেমনি মহানবি (সা.) রমজানের সিয়াম পালনকে ইসলামের পাঁচ বুনিয়াদের অন্যতম বলে সাব্যস্ত করেছেন এবং এ ইবাদতের অশেষ পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করেছেন।

রমজানের সিয়ামের এক ফজিলত এই যে, তা গুনাহ মাফ ও পাপমোচনের কারণ। বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) এর বরাতে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ইমান ও সিয়াম ফরজ হওয়ায় সন্তুষ্টিসহকারে এবং এর পুরস্কার ও প্রতিদান লাভের আশায় সিয়াম পালন করবে। এটি ফরজ হয়েছে বলে অসন্তুষ্ট হবে না। তেমনি এজন্য যেসব পুরস্কার ও প্রতিদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনোরূপ সন্দেহ করবে না। তাহলে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মহানবি (সা.) ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত এবং রমজান থেকে অন্য রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তীকালে পাপের জন্য মোচনকারী-যখন গুরুপাপগুলো বর্জন করা হয়।

বুখারি ও মুসলিম শরিফে আরেকটি হাদিস রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবি করিম (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের সব কাজই তার জন্য, শুধু সিয়াম ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। সিয়াম হলো ঢাল। যখন তোমাদের কারও রোজার দিন হয়, তখন সে যেন অশ্লীলতা না করে, ঝগড়া না করে। যদি তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে-আমি রোজাদার।

মুসলমানদের পারস্পরিক সমবেদনা ও সহানুভূতির চেতনা জাগ্রত হয় সিয়ামের কারণে। আদম-হাওয়ার সন্তান হিসাবে বিশ্বের সমগ্র মানবগোষ্ঠী যে একই পরিবারের সদস্য, তার দাবি অন্যদের কষ্ট ও দুর্দশা অনুভব করা। সিয়ামের কারণে সেই অনুভূতি আসে।

তাই সিয়াম আদায়ের ফলে মুমিন বান্দাদের মধ্যে যেমন তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়, তেমনি মানবসমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ সৃষ্টিতে এ ইবাদতের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এজন্য আগের আম্বিয়ায়ে কেরামের যুগেও সিয়ামের বিধান ছিল। এমনকি রমজানের সিয়াম ফরজ হওয়ার আগেও মহানবি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম কোনো কোনো বিশেষ দিন ও উপলক্ষ্যে সিয়াম আদায় করতেন।

বিশেষ করে মহররম মাসের ১০ তারিখ বা আশুরার দিনে রোজা রাখার নিয়ম চালু ছিল প্রথম থেকেই এবং এ রোজার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হতো। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হিসাবে থেকে যায়। তা ছাড়া প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ যা আইয়ামে বিজ বা উজ্জ্বল দিনগুলো নামে পরিচিত, সে দিনগুলোতে আল্লাহর রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা (রা.) রোজা রাখতেন। এখনো এসব দিনের সিয়াম পালন করার ফজিলত অনেক।

অতএব, সিয়ামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। তাই সিয়াম আদায়ে আন্তরিকতা প্রয়োজন। তবেই মাহে রমজানের মাহাত্ম্য অর্জন সম্ভব হবে।

লেখক : ইমাম, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম