নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি
বাস্তবায়ন হচ্ছে না দুর্নীতির কারণে
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিলের দাবি সিপিডির

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতির কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি। ফাইল ছবি
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, বিদ্যুতের বড় ঘাটতি মেটাতে ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের প্রয়োজন ছিল, তবে বর্তমানে আইনটি অদক্ষতার জায়গা তৈরি করছে।
সংস্থাটির মতে, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের কারণে সরকারকে বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পক্ষ পাচ্ছে বাড়তি সুবিধাও। অবিলম্বে আইনটি বাতিল করার দাবি জানিয়ে সিপিডি বলছে, নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে-এমন চুক্তিতে গেলে বাড়তি ভর্তুকির চাপ থেকে সরকার সরে আসতে পারবে।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির সিপিডি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০০৯ সালে জরুরি বিদ্যুৎ আইনের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় বড় রকমের বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, সেটা মেটানোর জন্য চুক্তির দরকার ছিল। এরপর চারবার রিনিউ হয়েছে ওই আইন। আমরা মনে করি, এখন যে জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এরকম চুক্তির আর প্রয়োজন নেই।
দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন থেকে সরকারের সরে আসা দরকার। এই আইন বিভিন্নভাবে সমস্যা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে, এর আগেও যেগুলো হয়েছে, সেগুলো এখন সরকারের জন্য বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ। এর মূল কারণ এই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন। কয়েকবার এর সংশোধন করে এর মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি, অনতিবিলম্বে এই আইন অবলোপন এবং তা থেকে সরে আসা দরকার, যা হলে প্রতিযোগিতামূলক কাঠামোয় আমরা চলে যেতে পারব।
সিপিডির এ গবেষক পরিচালক বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি সমন্বয় নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির সমন্বয় করা হচ্ছে ভোক্তার ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে। অথচ এর পুরোটা হয়েছে ফল্টি (ভুল), যেসব পলিসি করা হয়েছে এই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইনের অধীনে (তার কারণে)। এ কারণে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সেটির দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাবসিডি অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনটি যদি অবলোপন করা হয় এবং সেই অনুযায়ী সব চুক্তির সংশোধনী আনা হয়; নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে-এমন চুক্তির দিকে যদি যাওয়া হয়, তাহলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যে বাড়তি ভর্তুকি, এখান থেকে ন্যাচারালি সরে আসার সুযোগ রয়েছে। ফসিল ফুয়েল থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে রিনিউয়েবল এনার্জি (নবায়নযোগ্য শক্তি) দিকে গেলে বড় রকমের ভর্তুকির চাপ থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে। নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২-এর খুঁটিনাটি তুলে ধরে গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য ২০৪১ সালের ভেতর ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণ, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
নতুন পলিসিতে বায়ু, বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস এনার্জি, ওয়েস্ট টু ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি, হাইড্রো এনার্জি বিষয়ে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে রয়েছে জিওথার্মাল এনার্জি, টাইডাল এনার্জি, ওয়েভ এনার্জি, রিভার কারেন্ট, হাইড্রোজেন এনার্জি প্রভৃতি। এছাড়া পলিসির প্রথম দফায় ২০২৫ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা সামগ্রিক উৎপাদনের ১০ শতাংশ। এছাড়া ২০২৬-২০৪১ সালে ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং ২০৩১-২০৪১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা উৎপাদনের ৪০ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ সালে গৃহীত পলিসির আওতায় সামগ্রিক উৎপাদনের ৮ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটা পলিসির ব্যর্থতা।
নতুন নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসের কথা বলা হয়েছে। শুধু সোলার বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়নি। রুফটফ সোলার, নেট মিটারিং, মিনি গ্রিড, ন্যানো গ্রিড, সোলার ইরিগেশন, চার্জিং স্টেশন, স্ট্রিট লাইটে রিনিউয়েবল এনার্জি, ফ্লোটিং সোলার সিস্টেম-এরকমভাবে ডিটেইল বলা আছে। এর ভিত্তিতে আগামী দিনে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা বলা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে কিছু টার্গেটের কথা বলা হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সমৃদ্ধ হতে কৃষিজমি নষ্ট করার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ফাঁকা চর, বাড়ির ছাদ কিংবা রেলওয়ের খোলা জমিতে সোলার বসিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।