অগ্নিঝরা মার্চ
গণহত্যার নীল নকশা অনুমোদন ইয়াহিয়ার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের ২০তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ ছিল শনিবার। এদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির স্বাধিকারের আন্দোলন চিরতরে দমনের নীল নকশা বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দিক সালিকের বই ‘উইটনেস টু স্যারেন্ডার’ থেকে জানা যায়, এদিন ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ পদস্থ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে তাদের করণীয় বিষয় হয় বাঙালি জাতিকে দমন, সেজন্য ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়।
‘উইটনেস টু স্যারেন্ডার’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ছয় থেকে ১৭টি পর্যন্ত পিআইএ ফ্লাইটে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কয়েকটি জাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্র বোঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। এদিন সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছয় শীর্ষ সহযোগী-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। সময় এলে অবশ্যই আমি সবকিছু বলব।
রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।
অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিনেও বাঙালির দৃপ্ত পদচারণায় টালমাটাল ছিল ঢাকা। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাবেক নৌ সেনাদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিন একের পর এক শোভাযাত্রা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না। করাচিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সন্তোষজনক জবাব পেয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহি এদিন সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।