Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অগ্নিঝরা মার্চ

বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ‘আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ‘আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি’

অগ্নিঝরা মার্চের ১৭তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ ছিল বুধবার। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেন। অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও আসে এ দিনেই।

বাংলার চলমান অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকাল ১০টায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে মিলিত হন। কড়া সামরিক পাহারার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার সঙ্গে ইয়াহিয়ার প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলে।

প্রথম দিনের মতোই আলোচনা শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে আলোচনার পরবর্তী সময়ও ঠিক হয়নি।’ সেখান (প্রেসিডেন্ট ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু নিজের বাসভবনে গেলে একজন সাংবাদিক জানতে চান বৈঠক সংক্ষিপ্ত হলো কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু মৃদুু হাসেন। আরেক বিদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘এই হাসি থেকে আমরা কি কিছু অনুমান করে নিতে পারি?’ জবাবে শেখ মুজিব বলেন, ‘আপনার মুখেও তো মৃদু হাসি। আমি জাহান্নামে বসেও হাসতে পারি।’

এদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে শাসনতন্ত্র নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান।

অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকায় কুচকাওয়াজ ও রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসাবে পালনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এ উপলক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা সকাল ৬টায় সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সব ধরনের যানবাহনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন, প্রভাত ফেরি, শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ এবং বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করে।

একাত্তরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে গিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানায়। জন্মদিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার জন্মদিনই কী আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। আপনারা আমার জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে।’

সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ‘পূর্ববাংলা এখন স্বাধীন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এখন স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। আমার ৮৯ বছরের অতীতের সবক’টি আন্দোলনের সাথে আমি জড়িত ছিলাম। কিন্তু একটি সর্বজনীন দাবিতে জনগণের মধ্যে বর্তমান সময়ের মতো একতা ও সহযোগিতা আমি এর আগে কখনো দেখিনি।’

ঢাকার তেজগাঁও এবং মহাখালীতে পাকসেনারা ট্রাকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে এবং নিরস্ত্র লোকদের ওপর নির্যাতন চালায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিন বাংলাদেশিদের জন্য খাদ্য সহায়তা বহনকারী ‘ইরনা এলিজাবেথ’কে চট্টগ্রাম বন্দরে আটক করা হয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি বন্দর অভিমুখে ফেরানো হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম