মিতু হত্যা মামলা
স্বামী বাবুলসহ ৭ আসামির বিচার শুরুর আদেশ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ফাইল ছবি
ঘটনার প্রায় সাত বছর পর স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৯ এপ্রিল থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সোমবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হওয়ার পর বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। পরে সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
আদালত সূত্র জানায়, এদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্য আরও চার আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। দুপুরে আদালতে সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। আদালত তাদের দোষী নাকি নির্দোষ জানতে চাইলে সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এদিকে বাবুলের আইনজীবীরা দুটি আবেদন জমা দেন। একটি তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান, অপরটি তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আবেদন।
এ ব্যাপারে বাবুল আকতারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগ গঠন থেকে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সেটা খারিজ করে দিয়েছেন। তবে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গত বছর ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয় বাবুল আক্তারকে। অন্য আসামিরা হচ্ছেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া। মুসা ও কালুকে পলাতক হিসাবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
পিবিআই তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, গায়ত্রী অমর সিং নামে বিদেশি এক এনজিও নারী কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে বাবুল আক্তার ‘পথের কাঁটা’ দূর করতে স্ত্রী মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি তিন লাখ টাকায় ভাড়া করেন খুনি। তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা ছিলেন কিলিং মিশনের প্রধান। খুনের জন্য মুসাকে ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেন বাবুল।
আদালতে একাধিক আসামির জবানবন্দি, পরকীয়ার বিষয়ে গায়ত্রী ও বাবুলের হাতের লেখা ডায়েরি তথা আলামত উদ্ধারসহ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পিবিআই বাবুলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করে।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন তার করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে বাদী বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পরদিন ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই সময় পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে মোশাররফের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে পরে আদালতের নির্দেশে বাবুলের করা মামলাটিই বহাল থাকে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মিতুকে।