কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন
ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মজবুতে পাঁচ সুপারিশ
সিদ্দিকবাজার ট্র্যাজেডি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সপ্তম দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কারিগরি কমিটি।
তারা জানিয়েছেন, ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে বর্তমান অবস্থায় ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে না। বরং ছয় মাসের মধ্যে ভবনটির রেক্টোফিটিং (মজবুতকরণ) করতে হবে। এই সময়ে ভবনটির সামনের নর্থ সাউথ রোডের যান চলাচল সীমিত থাকবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পাঁচটি সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। সোমবার রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক ও রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী যুগান্তরকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রথম সুপারিশ হলো-ভবনটিকে দ্রুততার সঙ্গে প্রপিং করে স্ট্যাবল (ঠেকা দিয়ে স্থিতিশীল করা) করতে হবে। এই সুপারিশের সঙ্গে গাড়ি চলাচলের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ৪৫ দিনের মধ্যে ভবনটির ‘ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’ করতে হবে।
তৃতীয়ত, এর মাধ্যমে প্রাপ্ত রেক্টোফিটিংয়ের ডিজাইন (নকশা) ছয় মাসের মধ্যে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
চতুর্থত, রেক্টোফিটিং না করা পর্যন্ত ভবনটিতে কেউ বসবাস করতে পারবে না।
আর সর্বশেষ সুপারিশে বলা হয়েছে-সব কাজ শেষ হওয়ার পর রাজউক কারিগরি কমিটির মাধ্যমে একটি সনদ দেবে। তারপর ভবনটিতে বসবাস করা যাবে।
কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক আরও জানান, প্রথম সুপারিশের কাজটি তদারকি করে ইতোমধ্যে আমরা সম্পন্ন করেছি। এই সুপারিশের সঙ্গে যান চলাচলের বিষয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে ভবনের সামনের যে স্থানটিতে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে সেটি বন্ধই থাকবে। আমরা বলেছি, যে জায়গায় ব্যারিকেড দেওয়া আছে, অর্থাৎ কলাম থেকে ২৬ ফিট দূরে, সেখানে ব্যারিকেড রেখে সামনের দিকের রাস্তাটা শর্ত সাপেক্ষে খুলে দিতে। সেখানে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করবে। বাকি সময় বন্ধ থাকবে। যেহেতু রাত ১০টার পর ভারী গাড়ি চলাচল করে-এজন্য আমরা বলেছি এই গাড়িগুলো যেন সামনের সড়কটি এড়িয়ে চলে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যতটুকু ব্যারিকেড আছে তারপরও ভবনের সামনের সড়কে ২০-২৫ ফুট জায়গা সামনে থাকবে। তাতে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’-এর জন্য আমরা ৪৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছি। কোনো একটা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান দ্বারা এটি করতে হবে। এর মাধ্যমে রেক্টোফিটিংয়ের যে ডিজাইন আসবে ভূমির মালিককে ছয় মাসের মধ্যে বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন অনেক প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করছে। মানসম্পন্ন যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজটি করলেই হবে।
ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী বলেন, ভবনটির অনুমোদন ছিল পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবনের। কিন্তু ভবনটি আমরা দেখেছি সাততলা। সেটিও মিক্সড ডিজাইন। নিচের তিনতলা বাণিজ্যিক এবং ওপরের তলাগুলো আবাসিক। সেই হিসাবে ধরলেই বোঝা যায়, এখানে নিয়মটি মানা হয়নি।
৭ মার্চ বিকালে সিদ্দিকবাজারে একটি সাততলা ভবনে বিকট শব্দে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এতে ২৪ জনের মৃত্যু হয় এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। বিস্ফোরণে ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে স্যানিটারি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরিত ভবনের দুই পাশে থাকা ভবনও।
ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে রাজউক। এর আগে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি কলামে ১৯টি স্টিলের পাইপ বসানো হয়, যাতে ভবনটিতে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো যায় এবং ভবনটি ধসে না পড়ে।