সিলেট মহানগর বিএনপির কাউন্সিল
তারিখ পরিবর্তনে বদলে গেল অনেক কিছুই
সংগ্রাম সিংহ, সিলেট
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট মহানগর বিএনপির কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে গেছে। কাউন্সিলে প্রার্থী হতে অনেকে দলীয় মনোনয়নপত্র নিলেও চাপের মুখে জমা দিতে পারেননি।
দলে ঢাকাপন্থি ও লন্ডনপন্থিদের রেষারেষিতে সাধারণ নেতাকর্মীরা বেকায়দায় পড়েছে। সকালে যিনি হিরো বিকালে তিনি জিরো। এমন অবস্থায় কার অনুসারী হবেন, কার নামে স্লোগান দেবেন-তা নিয়ে তারা দ্বিধায় পড়েছেন। দলে ‘ইনডোর গেম’ চলায় কেন্দ্রের আন্দোলন-কর্মসূচিতে সিলেট বিএনপি সিরিয়াস হতে পারছে না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি যুগান্তরকে বলেন, নগরীর ওয়ার্ডগুলোয় বিএনপিকে সংগঠিত করেছি, কমিটি দিয়েছি। অথচ সভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র নিলেও কেন্দ্রের নির্দেশে তা জমা দিতে পারিনি।
প্রার্থী হওয়ার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির যুগান্তরকে বলেন, আহ্বায়ক প্রার্থী হতে পারবেন না-এটা আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়ার সময় বলে দেওয়া হয়েছে।
৪ মার্চ মহানগর বিএনপির কাউন্সিলের টার্গেট নিয়ে শীর্ষ তিন পদের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। হঠাৎ সেই তারিখ বদলে ১০ মার্চ করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। মহানগর বিএনপির সভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন পাঁচ নেতা। এর মধ্যে তিনজনই জমা দিতে পারেননি। সাবেক ছাত্রনেতা ও মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব বাদ পড়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের প্রার্থী ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকতার রশীদ চৌধুরীও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। চাপের মুখে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন।
সভাপতি পদের জন্য বদরুজ্জামান সেলিম মনোনয়নপত্র তুললে সোমবার রাতে তার বাসায় যান খন্দকার মুক্তাদিরের নেতৃত্বে প্রভাবশালী নেতাদের একটি টিম। লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের অনুসারী মুক্তাদির। টিমে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, নগর বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী নাসিম হোসাইনসহ কয়েকজন। সেলিমের সঙ্গে বৈঠক করে তারা লন্ডনের বার্তা পৌঁছে দেন। এরপর সেলিম আর মনোনয়নপত্র জমা দেননি। তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট সেলিম লন্ডন থেকে উড়ে এসে ২১ জানুয়ারি ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাদের ডেকে ঘটা করে সভাপতি পদে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশে মাত্র এক মাস অবস্থানকালে বদলে যায় চিত্রপট। তবে লন্ডনের গুডবুকে নাম উঠে আসে আরেকজনের। বাদ পড়েন সেলিম। ঢাকার নেতৃত্বের অনুসারীরা লন্ডনের নেতৃত্বের কাছে অনেকটা বেকায়দায়।
এবারের কাউন্সিলে কারও সাতে-পাঁচে নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার কোনো প্রার্থীও নেই। এমন পরিস্থিতিতে দল ত্যাগ করেছেন প্রভাবশালী নেতা শামসুজ্জামান জামান ও ছাত্রদলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আলী আকবর রাজন। মহানগরীতে দলের এমন অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। সোমবার রাতের আঁধারে কাউন্সিলের চিত্রপট পালটে যায়। মঙ্গলবার রাতে জুতা ও ঝাড়ু মিছিল করা হয়। মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তৃণমূল বিএনপি। বিদ্রোহীদের দাবি-ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দালালদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান সাগর, সুহেল মিয়া, কাওছার আহমদ, সুমায়েল আহমদ, সুমন আহমদ, সামাদ হোসেন, সিদ্দিকী পারভেজসহ অনুসারীদের এমন মন্তব্য।
অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ যুগান্তরকে বলেন, কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ২৭টি ওয়ার্ডের ১ হাজার ৯১৭ ভোটারের তালিকা পেয়েছি। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও সভাপতি প্রার্থী মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ১০ মার্চ কাউন্সিল হবে।
জানা গেছে, মহানগর কাউন্সিলে সভাপতি পদে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ শফি সায়ীদ সাহেদ, বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল ফরহাদ, মহানগর বিএনপির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ সাফেক মাহবুব লড়বেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড কমিটির প্রতিটি থেকে ৭১ জন করে ভোটার রাখা হয়েছে।