শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
পুরোনো ৩ মেগা প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্তে দুদক
প্রকল্প বাস্তবায়নসংশ্লিষ্ট সব ধরনের ফাইল ও নথি তলব * প্রকল্পের শুরু থেকে চেক দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও দায়িত্বের বিবরণ চেয়ে বেবিচকে চিঠি
মুজিব মাসুদ
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরোনো ৩ মেগা প্রকল্পসহ একটি বড় কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রকল্পগুলো ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে শাহজালালের ড্যানিশ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ও রানওয়ে প্রকল্প। এছাড়া সিভিল এভিয়েশনের ম্যানেজার ভবনের সামনের খালি জায়গা কার্পেটিং-সংক্রান্ত একটি কাজ রয়েছে এই তালিকায়।
অভিযোগ উঠেছে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুস বাণিজ্য করেছেন। বেবিচক চেয়ারম্যানকে দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি চিঠিটি দুদক থেকে বেবিচকে পাঠানো হয়।
আরও জানা যায়, তদন্তের স্বার্থে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে প্রকল্পগুলোর যাবতীয় ফাইল চেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের ডিপিপি, বাজার দর মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, পত্রিকায় প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার ওপেনিং কমিটি ও বাছাই কমিটির তালিকা এবং তাদের প্রতিবেদন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, কার্যাদেশ, কাজের বিল-ভাউচার, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি, প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন, চুক্তিমূল্যসহ যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
এছাড়া এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা, পদবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, কর্মকাল ও দায়দায়িত্বের বিবরণ ছক আকারে দেওয়ার জন্য দুদকের চিঠিতে বলা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ডেনমার্কের সাহায্যদাতা সংস্থা ডানিডার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আপগ্রেডেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে আছে।
খোদ ডানিডার এক তদন্তেও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কারণে ডানিডা ওই সময় বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ না করার জন্যও বলেছিল।
জানা যায়, বেবিচকের একটি সিন্ডিকেট ওই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসি করে। একপর্যায়ে সময় নষ্ট হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় ২০০ কোটি টাকার বেশি। যে টাকা দেওয়ার জন্য তারা ডানিডাকে চাপও দিয়েছিল।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ডানিডার ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, সিভিল এভিয়েশনের একটি সিন্ডিকেট প্রকল্পের সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করে।
দাতা সংস্থা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিষয়টিতে আপত্তি জানালেও সিন্ডিকেট সেসময় কর্ণপাত করেনি। দাতা সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পায় প্রকল্পের জন্য দুবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথমবারের দরপত্রে ২৬২ কোটি টাকার প্রস্তাব পাওয়া গেলেও অদৃশ্য কারণে তা বাতিল করা হয়।
প্রায় ১ বছর পর দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হলে একই কাজে ৫৪০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাওয়া যায়। এছাড়া দ্বিতীয়বারের দরপত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরের মধ্যে ১৫ কোটি টাকার ব্যবধান পাওয়া যায়।
কিন্তু এরপরও সিন্ডিকেট সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। এ নিয়ে দাতা সংস্থা ও বেবিচকের টানাপোড়েনের কারণে ১০ বছরের বেশি সময় ঝুলে ছিল প্রকল্পটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, প্রতিবছরই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় টাকা শেষ, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমনকি ২০১০-১১ অর্থবছরের বৈদেশিক সাহায্য হিসাবে পাওয়া অর্থের প্রায় পুরোটাই ফেরত দিতে হয়েছিল। পরে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।