Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩

প্রাণের মেলা সাঙ্গ হবে আজ

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাণের মেলা সাঙ্গ হবে আজ

বই ঘিরে মাসব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে আজ। কোভিডকালে আশাভঙ্গের বেদনা কাটিয়ে প্রাণোচ্ছলতা নিয়ে এ বছর অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছিল। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে কয়েক দিনের মধ্যেই মেলা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই মেলা শেষ হতে যাচ্ছে-এটা ভেবে অনেকেরই মন খারাপ। তবে শেষ দিনে পাঠকে ভরে উঠবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। বই কেনার জোয়ারও বইবে। এমনটাই আশা করছেন মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে লেখক-প্রকাশক ও কবিরা স্মরণ করেন প্রথাবিরোধী কথাসাহিত্যিক-ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। ১৯ বছর আগে এদিনে সন্ধ্যায় বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ। তার অনুসারীদের মতে, সেদিনের আক্রমণই পরে তার মৃত্যু ডেকে এনেছিল। সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ চত্বরে হুমায়ুন আজাদ স্মরণে সভা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে সভার শুরুতে তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণির সভাপতিত্বে আলোচনায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি মোহন রায়হান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবির, কবি আসলাম সানী ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ আরও অনেকে অংশ নেন।

সাজ্জাদ কবির বলেন, আজ হুমায়ুন আজাদকে বইমেলা প্রাঙ্গণে স্মরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তার কোনো ছবি বা প্রতিকৃতি মেলা প্রাঙ্গণে কোথাও দেখছি না। আমি অনেক দেশে গেছি। সেখানে তরুণ পাঠকের কাছে হুমায়ুন আজাদ এখনও সক্রিয়।

মোহন রায়হান বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা তার ওপর আক্রমণ করেছিল তারা আজও বাংলাদেশকে হত্যা করতে চায়। আজও তারা হুমকি দেয় বোমা মেরে বইমেলা উড়িয়ে দেওয়ার।’ তিনি বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় লড়াকু লেখক ছিলেন।

মেসবাহ কামাল বলেন, যখন বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তখন বিভ্রান্তির জাল ছিঁড়ে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে হুমায়ুন আজাদ কলম ধরেছিলেন। তার প্রতিটি লেখা ছিলো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি ও মৌলবাদের বিপক্ষে।

২০০৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার সময় মৌলবাদী চক্রের আক্রমণে গুরুতর আহত হন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। চিকিৎসায় অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে নিজ ফ্ল্যাটে মারা যান তিনি। দিনটি উপলক্ষ্যে আগামী প্রকাশনী প্রতি বছর বইমেলায় ‘হুমায়ুন আজাদ দিবস পালন’ করে। ‘লেখক-প্রকাশক পাঠক ফোরামের’ ব্যানারে এবারের স্মরণসভার প্রতিপাদ্য ছিল ‘পাইরেসিমুক্ত বইমেলা চাই’।

এদিন বইমেলায় অসংখ্য পাঠক সমাগম হয়। অনেকের হাতে হাতে দেখা গেছে বইয়ের ব্যাগ। বিকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববাঙালির সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশ নেন, এএফএম হায়াতুল্লাহ, আল মামুন ও জসিম মল্লিক। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বিশ্ববাঙালি বলতে পুরো বিশ্বের বাঙালি সম্প্রদায়কেই বোঝানো হয়, যার মধ্যে বাঙালির সর্ববৃহৎ দুই ঠিকানা, বাংলাদেশ ও ভারত অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও যেসব সাহিত্যিক দেশান্তরী হয়ে বিদেশে বসবাস করছেন এবং যারা বিদেশে অভিবাসনের পর সাহিত্যরচনা শুরু করেছেন তাদের সাহিত্যকেই বিশ্ববাঙালির সাহিত্য বলা যায়। তাদের মধ্যে কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ভ্রমণ সাহিত্যিক, অনুবাদক, বিজ্ঞান লেখকসহ সব ধরনের লেখকই রয়েছেন। তাদের লেখায় প্রবাসজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি, স্বদেশের স্মৃতি-আখ্যান, অভিবাসী জীবনের সংগ্রাম, সংকট ও স্বপ্নের কথা প্রকাশিত হয়।’

এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা, মুমিত আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল, আরেফিন রব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন রোকেয়া ইসলাম, শেখর বরণ, সৌম্য সালেক, খসরু পারভেজ, সুবর্ণ আদিত্য, জান্নাতুল ফেরদৌসী ও থিউফিল নকরেক। আবৃত্তি করেন সাইমুন আনজুম ইভান, সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ, অনন্যা রেজওয়ানা ও ফারহানা তূর্ণা। এছাড়া ছিল মিলন কান্তি দে’র রচনা ও নির্দেশনায় দেশ অপেরা যাত্রাপালার পরিবেশনা ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’।

নতুন বই : এদিন মেলায় শব্দশৈলী থেকে প্রকাশ হয়েছে ফজলুর রহমানের গল্পের বই ‘কুহক’, সামশাদ সুলতানা খানমের উপন্যাস ‘অলকানন্দা’, অন্যপ্রকাশ থেকে অসীম হিমেলের উপন্যাস ‘ধূম্রজালে খেদু মিয়া’। আরও প্রকাশ হয়েছে তানজিল সুচিরার ‘কাচের হৃদয়’।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম