Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করেও বিনিয়োগ

চীনা অ্যাপের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত লাখো গ্রাহক

রাজশাহীর এজেন্ট মানিকের খোঁজে গ্রাহকরা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চীনা অ্যাপের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত লাখো গ্রাহক

চীনা অ্যাপ ই-মুভি প্ল্যান। এতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকায় হিসাব খুলে সিনেমার টিকিট কিনলেই পাওয়া যাবে ডলার। রাতারাতি হওয়া যাবে লাখপতি-কোটিপতি।

অনলাইনের এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন সারা দেশের লাখো গ্রাহক। শুধু রাজশাহীতেই প্রতারিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের হিসাব নম্বর শূন্য হয়ে যায়। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের প্রায় সব জেলায় ই-মুভির গ্রাহক থাকলেও কোনো কোনো এলাকায় এটি ছড়িয়েছিল সংক্রামক ব্যাধির মতো। এর একটি রাজশাহী। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী ও পবার খড়খড়িতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছিলেন গ্রাহক। রিকশা-অটোরিকশা, বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করেও অনেকে বিনিয়োগ করেছিলেন।

‘ই-মুভি প্ল্যান’র রাজশাহীর এজেন্ট ছিলেন আজমল হুদা মানিক। তাকে খুঁজছেন গ্রাহকরা। নগরীর শিরোইল কলোনির সাড়ে ৩ নম্বর গলিতে মানিকের কার্যালয়ে এখন তালা ঝুলছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিলউথরাইয়ে। রাজশাহীর অনেক গ্রাহক সেখানে গিয়েও মানিকের খোঁজ পাননি।

মানিকের মাধ্যমে ই-মুভি প্ল্যানে ঢুকেছিলেন নগরীর কয়েরদাঁড়ার বাসিন্দা রাশিদুল হক। বিনিয়োগ বেশি থাকায় তাকে ই-মুভির সিটি পার্টনার পদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, মানিক আমাদের বলেছিল, বেশি টাকা ঢোকাও, তোমাদের হংকং বেড়াতে নিয়ে যাব। সেজন্য বেশি টাকা ঢুকিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছি।

রাশিদুল জানান, তিনি ধার করে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তার ছোট ভাই নিলয় মোটরসাইকেল বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছিলেন এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। আরেক ছোট ভাই রাব্বি ধার করে বিনিয়োগ করেছিলেন ৩০ হাজার টাকা। সব খুইয়ে তারা দিশেহারা।

জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে গুগল প্লে স্টোরে ই-মুভি প্ল্যানের অ্যাপ দেওয়া হয়। এই অ্যাপে সর্বনিু দুই হাজার টাকায় একটি হিসাব খোলা যেত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিলেই তা হিসাবে ডলারে দেখাত। সেই ডলার দিয়ে অ্যাপে বিভিন্ন দেশের সিনেমার টিকিট কিনলেই লভ্যাংশ দেওয়া হতো। বিনিয়োগ করা টাকা উঠে যেত এক মাসেই।

একসঙ্গে তিন হাজার ডলার বিনিয়োগে এক মাসে লাভ দেখানো হতো ৩৬০ গুণ বেশি। কম সময়ে ধনী হওয়ার এই ফাঁদে পড়ে রাজশাহীসহ সারা দেশের কয়েক হাজার মানুষ টাকা হারিয়েছেন। গ্রাহকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১২ ফেব্রুয়ারি ই-মুভি প্ল্যান বন্ধ হয়ে যায়। এই অ্যাপের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন চীনা নাগরিক।

ই-মুভি প্ল্যান বন্ধ হওয়ার পর এর মালিক পরিচয় দিয়ে এলিস নামের এক নারী টেলিগ্রাম গ্রুপে গ্রাহকদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘টাকা কেলেঙ্কারির জন্য আমরা কমই দুঃখিত! নতুন কোম্পানি করে আবার ফিরব। দয়া করে পরেরবার এতবড় অঙ্কের বিনিয়োগ করবেন না। আমরা ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত কেলেঙ্কারি করি। সবাইকে বিদায়।’ এই বার্তা দেখে গ্রাহকরা বুঝেছেন, এক টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। তাই তারা খুঁজছেন এজেন্টদের।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ই-মুভির প্রতারক চক্রের সঙ্গে স্থানীয় এজেন্টদেরও যোগসূত্র আছে। ই-মুভির নারায়ণগঞ্জের এজেন্ট এমিলা ফাইজা, খাগড়াছড়ির এজেন্ট রোমেন চাকমা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবির ইসমাইল হোসেন, ময়মনসিংহের সায়াফ আহমেদ ও নওগাঁর সাপাহারের ইসরাত জাহান লিজা সবাই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে সিরাজগঞ্জের এজেন্ট শেখ আরফান দাবি করেন, ই-মুভির মূল প্রতারক এজেন্টদেরও বোকা বানিয়েছে। তিনি বলেন, অক্টোবরে তার হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিংক দিয়ে ই-মুভিতে হিসাব খোলার আমন্ত্রণ জানানো হয়। চীন থেকে বার্তাটি এসেছিল। পরে তিনি ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেন। তখন দেড় হাজার টাকায় একটা হিসাব খুলে তিনি লাভ পেতে থাকেন। এতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করেন। তিনি কাউকে রেফার করলে ডলার পেতেন। তার দল বড় হলে তাকে অফিস করতে বলা হয়। অফিস খুললে তাকে এজেন্ট বানানো হয়।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা সদরের আমশো মহল্লার ফয়সাল সরকার খুইয়েছেন তিন লাখ টাকা। তিনি জানান, গোদাগাড়ী থেকে পরিচিত একজন গিয়ে তাকে হিসাব খুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। ফয়সাল বলেন, চীনা অ্যাপ বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ পথে বসে গেল। তাই সরকারের এসব নজরদারি করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ই-মুভি প্ল্যান আমাদের অথরাইজড সাইট নয়। তাই এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম