অমর একুশে বইমেলা ২০২৩
বাসন্তী সাজে ঘোরাঘুরি
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিকে হলুদ, বাসন্তী আর লাল রঙের ছড়াছড়ি। পাশাপাশি হাঁটা, হাতে হাত রাখা, প্রেমের উপন্যাস কিংবা কবিতার বই উপহার দেওয়া, ফুড কোর্টে বসে একে অপরকে খাইয়ে দেওয়া-এমন দৃশ্যই ছিল বসন্ত আর ভালোবাসার দিনের বইমেলায়।
শুধু যে তরুণ-তরুণীরা এসেছেন এমন নয়; বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে নিজেদের সাজিয়ে এসেছিলেন শিশু থেকে মধ্যবয়সিরাও। তবে সমাগমের তুলনায় বই বিক্রি হয়েছে কম। মেলায় পাঠক-ভক্তদের হাতে অটোগ্রাফসহ বই তুলে দেন ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকের মতো লেখকরা।
এদিন বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্সের নির্দেশে প্রবাসী লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতির বই বিক্রি বন্ধ করে দেয় নালন্দা প্রকাশনী। মেলার নীতিমালা পরিপন্থি ব্যক্তিগত আক্রমণ ও বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য থাকায় বইটি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক রেদোয়ানুর রহমান জুয়েল বলেন, বিকালে বাংলা একাডেমির টাস্কফোর্স এসে জান্নাতুন নাঈম প্রীতির ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’ বইটি বইমেলার স্টলে প্রদর্শন ও বিক্রির নিষেধ করে। পরে আমরা মেলার স্টলে বইটি প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ করি। তবে বইমেলার বাইরে বাংলাবাজার, অনলাইনে বইটি পাওয়া যাবে। টাস্কফোর্সের সভাপতি অসীম কুমার দে বলেন, ‘বইটিতে বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থি নানা বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি আক্রমণ, বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য।’
বিকালে বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএইচ হাবীব ও শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আবু জাফর ও মাহবুবা রহমান। সভাপতিত্ব করেন ফকরুল আলম।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বহুকাল ধরেই সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিস্পানিক, গ্রিক, লাতিনসহ বহু ভাষার সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ আমাদের পাঠের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে আসছে। বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং বাংলার নানান রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সাহিত্য অনুবাদকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। যদিও বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ বিপুলসংখ্যক পাঠকের চাহিদাকে পূরণ করে চলেছে। আড়ালে থেকেই অনুবাদ সাহিত্য জাতীয় সাহিত্যের পুষ্টিলাভে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে।
আলোচকরা বলেন, আমাদের দেশে বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ যত হয়েছে, সে তুলনায় বাংলা সাহিত্যের বিদেশি ভাষার অনুবাদ কম হয়েছে। তথাপি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হলে সেখানে অনুবাদ-সাহিত্যও বিশেষ স্থান পাওয়ার দাবি রাখে। দেশি অনুবাদকের পাশাপাশি বিদেশি অনুবাদকদেরও বাংলা ভাষার সাহিত্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ফকরুল আলম বলেন, বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অনুবাদের বিকল্প নেই। এজন্য দক্ষ অনুবাদক তৈরি করার জন্য আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি অনূদিত গ্রন্থ বিদেশি পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাসান মাহমুদ, আফতাব হোসেন, মিনার মনসুর ও আইরীন নিয়াজী মান্না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ঝর্না রহমান, হাসান হাফিজ, হাসনাত লোকমান, মোশাররফ শরীফ, মাসুদ পথিক ও শারমীন জাহান মিতু। আবৃত্তি করেন আওরঙ্গজেব আরু, শিমুল পারভীন ও পারভেজ চৌধুরী। এছাড়া ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মাতৃভূমি’-এর পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন খুরশিদ আলম, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, নবীন কিশোর, সঞ্জয় কুমার দাস, আঞ্জুমান আরা শিমুল ও চম্পা বণিক।
নতুন বই : এদিন বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৯৩টি।