জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু
অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান
অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের কবিরাও
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বানের মধ্য দিয়ে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা উৎসব। হালকা শীতের রোদেলা সকালে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও কাজী রোজীর স্মৃতির প্রতি।
সারা দেশের কবিদের সঙ্গে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত পঁয়ত্রিশতম এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন ভারত, নেপাল, ইরান ও অস্ট্রিয়ার কবিরা।
সকাল ১০টার পর উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়। গ্রন্থাগার চত্বর থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। পদব্রজে শোভাযাত্রা এগিয়ে যায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। যেখানে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শোভাযাত্রা যায় চারুকলাসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিসৌধে।
সেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও কবিতা পরিষদের পতাকা উত্তোলিত হয়। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কবি আমিনুর রহমান সুলতান। উৎসব উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যয়। আহ্বায়কের ভাষণ দেন শিহাব সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নতি অব্যাহত থাকলেও মানুষের ক্রমশ লোভী হয়ে ওঠা আমাদের মধ্যে ভীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সমাজের জন্ম হয়েছে সেই সমাজের কোমর যেন ভেঙে যাচ্ছে। তাই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে কবিদের।
ভূমিকা রাখতে হবে সমাজ পরিবর্তনে। কেননা কবিরাই সামরিক শাসনকে দূর করেছে। শিহাব সরকার বলেন, কবিতার ভেতর দিয়েই বাঙালি তার স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে। আরও ভেঙে বললে ‘বাঙালির স্বাধীনতা’ ও ‘কবিতা’ এই দুটি বিষয় পরস্পরের পরিপূরক। আমাদের কাছে কবিতাই স্বাধীনতা, স্বাধীনতাই কবিতা।
মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সব সুন্দরের শ্রেষ্ঠ সুন্দর হলো কবিতা। তাই ভাষার সুন্দরতম রূপ এই কবিতার সঙ্গে যে কোনো মহৎ সৃষ্টির তুলনা নতুন নয়। সেই সূত্রে বাংলার স্বাধীনতা আমার, আপনার ও অনাগত কালের সব বাঙালির প্রিয়তম কবিতা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ভারত, ভুটান, নেপাল, ইরান ও অস্ট্রিয়ার কবিদের অংশগ্রহণে কবিতাপাঠ ও মুক্ত আলোচনা হয়। এতে অংশ নেন ভারতের দিল্লির কবি অরুণ কমল, মুম্বাইয়ের মৃদুল দাশগুপ্ত, কাজল চক্রবর্তী, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, অনুভব তুলাসি, আগরতলার রাতুল দেব বর্মণ ও কলকাতার আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র। তাদের সঙ্গে ছিলেন ইরানের কবি মাজিদ পুইয়ান, অস্ট্রিয়ার ওয়ালি রি ও নেপালের ইন্দু থারু।
মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন, কবিতা হচ্ছে সব অশুভের প্রতিরোধ। সব কষ্ট নিরাময়েরও উৎস কবিতা। তাই কবিতার মাধ্যমেই মানুষে মানুষে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। অশুভকে সরিয়ে শুভবোধের উদয় ঘটিয়ে মানবিক সমাজ গড়তে হবে।
অরুণ কমল বলেন, বাংলাদেশে আসলে মনে হয় যেন কবিতাই স্বাধীনতা, কবিতাই সংস্কৃতি। কারণ এদেশের মানুষ ভাষার জন্য এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। উৎসবে পাঠানো ভারতের প্রখ্যাত কবি গুলজারের চিঠি থেকে পাঠ করেন সৌমিত্র মিত্র।
আমন্ত্রিত কবিদের আলোচনা শেষে আসাদ মান্নানের সভাপতিত্বে নিবন্ধিত কবিদের কবিতাপাঠের প্রথম পর্ব হয়। মুস্তাফা মজিদের সভাপতিত্বে হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কবিদের কবিতায় সজ্জিত অন্য ভাষার কবিদের কবিতা পাঠের দ্বিতীয় পর্ব। আনোয়ারা সৈয়দ হক ও অসীম সাহার সভাপতিত্বে হয় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব। রাতে আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আবৃত্তি পর্বে সভাপতিত্ব করেন গোালাম কুদ্দুছ। আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিন। বিকালে ২০২১ সাালের ৩৪তম উৎসবের জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদার হাতে। সন্ধ্যায় ২০২৩ সালের জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারজয়ী কবির নাম ঘোষণা করা হবে। এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা’ শীর্ষক সেমিনার।