Logo
Logo
×

শেষ পাতা

লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

মহাজোটের কার্যক্রম বিএনপিকে দেখে

পরিস্থিতি দেখে জাতীয় পার্টির মত নেবে আ.লীগ

Icon

আবদুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মহাজোটের কার্যক্রম বিএনপিকে দেখে

মহাজোট এখনই সক্রিয় হচ্ছে না। এই জোটের কার্যক্রম প্রকাশ্যে আসতে আরও সময় লাগতে পারে। আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির গতিবিধি দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আগামী বছর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ধরে মাঠ গোছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।

দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, মহাজোটকে সক্রিয় করার আগে বিএনপির গতিবিধি বোঝা দরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক কী কৌশল গ্রহণ করবে, এর ওপরও নির্ভর করছে মহাজোটের ভবিষ্যৎ।

এজন্য মহাজোটকে সক্রিয় করার বিষয়ে পরিস্থিতি দেখে জাতীয় পার্টির মতামত নেবে আওয়ামী লীগ। তাই নির্বাচনি এই জোটকে সক্রিয় করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন একটি কৌশলের বিষয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌশল কী হবে, তা সেসময়ের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আমরা ১৪ দল না মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করব, সেজন্য আরও অপেক্ষার প্রয়োজন। তবে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

যারা দেশের শান্তি ও উন্নয়নের পথে রয়েছেন, তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আমাদের দলের নেত্রী শেখ হাসিনার। ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিতই বৈঠক হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, মহাজোটের বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি। ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে জাপা এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বলে জানান তিনি।

এই উপনির্বাচন নিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনকে ঘিরেই আমাদের কাজ বক্তৃতা-বিবৃতি হয়। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছেন। সেজন্য তিনি সভা-সমাবেশ করছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী দিনেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। বিএনপি-জামায়াতের মতো অশুভ শক্তিকে রুখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক যে কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে এলে তাদের স্বাগত জানাব।

এদিকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের অনুকূলে রাখতে ১৪ দলীয় জোটকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও সেই পদক্ষেপ এখনো নেয়নি আওয়ামী লীগ। জাতীয় সম্মেলন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় এতদিন তারা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে জানান, মহাজোটকে সক্রিয় করা এবং এর পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোয় মহাজোটের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিল জাতীয় পার্টি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। আগামী নির্বাচনে দলটির ভূমিকা কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি সংগঠনটির নেতারা।

তিনি বলেন, জাপার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মহাজোটের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এছাড়াও নির্বাচনে বিএনপি জোটের অবস্থান পর্যবেক্ষণের বিষয়ও রয়েছে।

শুরুতে ১৪ দলকে শরিকরা আদর্শিক জোট দাবি করলেও এখন অনেকেই তা মনে করেন না। এর কারণ, পরবর্তী সময়ে ১৪ দলে নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও বাম ঘরানার ১১টি দল মিলে ১৪ দল গঠন হয়। এই জোট গঠনের পরপরই বেরিয়ে যায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণফোরামসহ কয়েকটি ছোট দল। কিন্তু জোটটি ১৪ দল নামেই সক্রিয় আছে।

বর্তমানে জোটে আছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) ও গণআজাদী লীগ। জাসদ (আম্বিয়া) নেতারা ১৪ দলের বৈঠকে এখন আর আসছেন না।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মহাজোটে ১৪ দলের শরিকদের পাশাপাশি আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট সক্রিয় রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে মহাজোটের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। মহাজোটে কোন কোন রাজনৈতিক দল যুক্ত হতে পারে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও রয়েছে আলোচনা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ১৪ দলের সঙ্গে এবারও মহাজোটে জাতীয় পার্টিকে রাখার চেষ্টা করা হবে। নির্বাচনি সমঝোতা হতে পারে কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গেও।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে ছিল ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মহাজোটের শরিকরা একধরনের সমঝোতার ভিত্তিতে পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয় কয়েকটি ইসলামিক দল। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৭ মে দুটি দল এবং দুটি রাজনৈতিক জোটের সমন্বয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) নামের একটি ‘বৃহত্তর জোট’ গঠন করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জোটে ৫৮টি দল ছিল। বর্তমানে জোটের তেমন কার্যকারিতা নেই। এর কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এলেও ইসলামি দলগুলোকে মহাজোটে যুক্ত করা হয়নি। গত নির্বাচনের পর শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ ১৪ দল থেকে বের হয়ে গেছে। এখন আলোচনায় রয়েছেন কাদের সিদ্দিকী।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা এখন নিজেদের মধ্যে ঐক্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমা করা শুরু হয়েছে বহিষ্কৃত নেতাদেরও। এমনকি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনের পর কঠোর সমালোচনায় লিপ্ত হন যিনি, সেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও ২৩ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। নির্বাচনের পর তিনি ওই জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর থেকেই কাদের সিদ্দিকী গণভবনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম