ডিসিদের ৫ সুপারিশ অর্থ বিভাগে
গৃহনির্মাণ ঋণ দেড় কোটি টাকা করার প্রস্তাব
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ গৃহনির্মাণ ঋণের অঙ্ক ৭৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণসহ পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।
আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আগাম এই সুপারিশ করেছেন। অন্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১৫শ’ টাকা চিকিৎসাভাতাকে বর্তমান ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয়, চাকরিজীবীদের সন্তানের শিক্ষাভাতা ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায় উত্তীর্ণ করা।
এ ছাড়া যুগোপযোগী করতে বলা হয়েছে সরকারি দাবি আদায় আইন-১৯১৩কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসকদের দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করে দেখছে অর্থ বিভাগ। জানা গেছে, বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের ব্যাপারে ইতিবাচক সম্মতি জানাবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আগামী ২৪-২৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলন সামনে রেখে প্রাক-প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কার্য-অধিবেশনে অংশ নেবেন ডিসিরা। কার্য-অধিবেশনগুলোয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপ-মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকেন। সরকারের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। সম্মেলনের মোট ২৬টি অধিবেশন ও কার্য-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাস্তবায়নযোগ্য শর্তগুলো কার্যকর করা হবে।
সূত্র মতে, সম্মেলন সামনে রেখে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে মোট পাঁচটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের শিক্ষাভাতা যুগোপযোগী করতে বলা হয়। বর্তমান শিক্ষাভাতা হিসাবে এক সন্তানের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুজনের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু এই টাকা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই অপ্রতুল বলে ডিসিদের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এ ভাতার অঙ্ক সন্তান সংখ্যার সঙ্গে যুগোপযোগী করা আবশ্যক বলে মনে করছেন তারা।
এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি মাসে ১৫শ’ টাকা হারে চিকিৎসাভাতা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে ১৫শ’ টাকা দিয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবে বলা হয় চিকিৎসা ভাতা বর্তমান ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানোর দরকার।
ডিসিদের প্রস্তাবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা সংশোধন এবং বিদ্যমান ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, একজন চাকরিজীবী গ্রেড ভেদে গৃহনির্মাণ ঋণ ৩০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন।
কিন্তু এই টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনা বা পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে একজন চাকরিজীবীকে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার সময় অন্য উৎস থেকেও ঋণ নিতে হয়। সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি চাকরিজীবীদের ঋণের ঊর্ধ্বসীমা দেড় কোটি টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বর্তমান যে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা আছে সেটি কেন সংশোধনের প্রয়োজন তার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তাদের (ডিসি) প্রস্তাবে। সেখানে বলা হয়, একজন চাকরিজীবী রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন, তফসিলি ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন থেকে গৃহনির্মাণ ঋণ পেয়ে থাকেন।
এই ঋণ পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ওই কর্মকর্তার বেতনের অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপর প্রতি মাসে ওই হিসাবে বেতন জমা হয়। পরে ঋণদাতা ব্যাংক কিস্তির টাকা কেটে নেওয়ার পর বাকি অর্থ ঋণ গ্রহীতা উত্তোলন করতে পারেন।
সেখানে আরও বলা হয়, চাকরির মেয়াদ কম থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রহণ করলে অধিক হারে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এতে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর ওপর বড় ধরনের আর্থিক চাপ তৈরি হয়। প্রস্তাবে ঋণের কিস্তিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক বাড়ি ভাড়ার বেশি না করার সুপারিশ করেন।
বর্তমান অর্থবছর গণনার মাস পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। সাধারণ জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এই ১২ মাসকে অর্থবছর হিসাবে গণনা করা হয়। এই অর্থবছর ধরে বাজেট প্রণয়ন, রাজস্ব আদায়, টাকা ব্যয় করা হয়। এখন জানুয়ারি টু ডিসেম্বর এই ১২ মাসকে অর্থ বছর হিসাবে গণনার প্রস্তাব করা হয়।
এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা ছাড় করা হয় অর্থবছরের শেষপ্রান্তে। কিন্তু এ সময় বর্ষাকাল থাকায় বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এতে অনেক সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়। এছাড়া দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এর গুণগতমান ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।
এতে সরকারের অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি জনগণের ভোগান্তিও সৃষ্টি হয়। তবে এটি এড়ানো সম্ভব যদি অর্থবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর চালু করা হয়।
এ ছাড়া সরকারি দাবি আদায় আইন ১৯১৩ যুগোপযোগী করার প্রস্তাবও করা হয়। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, অর্থঋণ প্রকাশিত হওয়ার পর সরকারি দাবি আদায় আইন ১৯১৩ কর্তৃক গঠিত সার্টিফিকেট আদালতের ওপর চাপ কমে গেলেও কালেক্টর বাহাদুর বা রাজস্ব বোর্ড বা সরকারের অন্যান্য পাওনা এখনো সমাধান করতে হয় পিডিআর অ্যাক্ট ১৯১৩ সালের আইন মোতাবেক।
কিন্তু আইনটি বেশ কিছু ধারা যুগোপযোগী করার প্রয়োজন। এ আইনের ৬৪টি ধারার মধ্যে বর্তমানে ৫৭টি, প্রথম তফসিল ১৫টি বিধি এবং দ্বিতীয় তফসিলে ৮৪টি বিধি রয়েছে। যার অধিকাংশ ধারা ও বিধি এখন সংশোধনের প্রয়োজন।