চট্টগ্রামে সেই প্রতিবাদী মুস্তাকিমকে পুলিশের নির্যাতন
তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া সেই মুস্তাকিম (২২) পুলিশের বিরুদ্ধে থানা হাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে তার ওপর এ নির্যাতন করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১০ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ।
মঙ্গলবার পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন মুস্তাকিম। এদিন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এদিকে মুস্তাকিমকে গ্রেফতার ও ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মুস্তাকিম মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থানার হাজতখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর থানার অন্য একটি কক্ষে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করার পাশাপাশি মারধর শুরু করে এক পুলিশ। এ সময় পায়ের নিচ থেকে পিঠ পর্যন্ত লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। আমি দুদিন প্রস াব করতে পারিনি। ক্রমাগত লাঠির আঘাত যখন সহ্য করতে পারছিলাম না, পা ধরতে গেলে হাতের ওপরও আঘাত লাগে। এখনো বাম পা এবং বাম হাত নিস্তেজ হয়ে আছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের সময় পুলিশ আমার দাড়ি দেখে জানতে চায়, আমি জামায়াত-শিবিরের লিডার কি না। আমি বলি, না। তারপর ওরা আবার বলে, তাহলে দাড়ি এত বড় কেন? এটা তো শিবিরের দাড়ি। তখন আমি বলি, আমাকে কিছু এনে দেন, দাড়িটা কেটে ফেলি। এটা বলার পরপরই একটি কালো লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারতে থাকে। ওরা এমনভাবে মারছিল, কোথায় আঘাত লাগছে, সেটাও দেখছিল না।’
জামিন পাওয়ার পর মোবাইল ও মানিব্যাগ আনতে মা-বোনসহ পাঁচলাইশ থানায় যান মুস্তাকিম। ওই সময় ওসি যথেষ্ট আপ্যায়ন এবং ভালো নাশতা খেতে দেন বলে জানান মুস্তাকিম। তিনি বলেন, ‘নাশতা খাওয়ার পর দেখি, একটা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ক্যামেরা নিয়ে এসেছেন। জিজ্ঞাসা করেছেন, আমাদের কেউ নির্যাতন করেছে কি না। এর আগে ওসি এবং ক্যামেরাম্যান আমাদের বলে দিয়েছে, ‘বলবা কেউ মারেনি’। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ওসির শেখানো কথামতো মিথ্যা জবানবন্দি দিই। ওদের কথামতো না বললে যদি আবার আমাকে মারে, সেই ভয়ে আমার মা ও আমি মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছি।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া প্রসঙ্গে মুস্তাকিম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দুপুরে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পেলে শরীরের অবস্থা জানা যাবে। এ বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নিজাম উদ্দিন মজুমদারের সরকারি মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি অসুস্থ বলে জানান ওসি (তদন্ত) সাদিকুর রহমান।
৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি : মুস্তাকিমকে গ্রেফতার ও আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা তদন্তে শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও মঙ্গলবার বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানো হয়। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মাহতাব উদ্দীনকে প্রধান করে কমিটির দুই সদস্য হলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আলী হোসেন ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আব্দুল খালেক।