আ.লীগের মুলতবি যৌথসভা
ভোটের আগে অভ্যন্তরীণ ঐক্যে গুরুত্বারোপ
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং জাতীয় কমিটির নেতারা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে আরও জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের মুলতবি যৌথসভায় তারা এমন পরামর্শ দেন। সভায় অধিকাংশ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগকে কখনো নির্বাচনে হারানো যায়নি। বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে হারানো হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি শ্রেণি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে যেতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।
যৌথসভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে। দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজের এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
যৌথসভায় বক্তব্য দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, রশিদুল আলম, খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, মোহাম্মদ জমির, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম, বজলুর রশিদ, সুলতানা সাফি, চন্দন শীল, খলিলুর রহমান মন্ডল, অধ্যক্ষ জোবায়দা খাতুন পারুলসহ জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ২০ সদস্য।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রশিদুল আলম বলেন, আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য দলের মধ্যে থাকা কোন্দল নিরসনের ওপর জোর দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনার ওপর জনগণের আস্থা রয়েছে। নৌকার প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। তাই দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে, ভালো প্রার্থী দিতে পারলে আমরা জয়ী হয়ে আসতে পারব।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জমির বলেন, নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। শুধু বিদেশিরাই নয়, দেশের একটি শ্রেণি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা ১/১১-তে কূটনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল তারা তৎপর হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।
জাতীয় পরিষদের সদস্য চন্দন শীল বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর যে উন্নয়ন করেছে, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে আবারও আমরা ক্ষমতায় আসব। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে যেতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, চোরের মায়ের বড় গলা। তাদের দুর্নীতির খতিয়ান সম্পর্কে আমি জানি। কারণ আমি দুদকের কর্মকর্তা ছিলাম। বিএনপি নেত্রীর ছেলে আরাফাত রহমান কোকো হংককে, সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছেন। সভায় বঙ্গবন্ধু ও মানবতাবাদকে উপজীব্য করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী সবার কথা শুনে তাদের দেওয়া প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেন। সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে জেলার সমন্বয় করে জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের পাশাপাশি জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদেরও স্ব স্ব জেলার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালনের কথা বলেন। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন ও নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের প্রচার চালানোর আহ্বান জানান। মোনাজাতের মাধ্যমে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী।