বিআইডব্লিউটিএ’র তালিকায় দখলদার ৪৩২০
রসুলপুর বস্তির নামে ফের দখলে কীর্তনখোলা
সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী কীর্তনখোলা নদী কয়েক হাজার দখলদার গিলে ফেলছে। এবার তারা রসুলপুর বস্তির নামে দখলে নেমেছে।
বিআইডব্লিউটিএ ৪ হাজার ৩২০ দখলদারের তালিকা করলেও এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। যদিও এ নদী রক্ষায় পরিবেশবাদীরা দুই যুগ ধরে আন্দোলন করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রসুলপুর বস্তির নামে নতুন করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে কীর্তনখোলার জায়গা দখলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের একটি অংশে বাঁশ ও টিন দিয়ে ঘিরে ১০ শতাংশ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করেছেন অজুফা বেগম।
স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে এ জমিতে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। এরপর টিন দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। হয়তো এরপর মাটি ভরাট করা হবে। তারপর স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে সাইনবোর্ডে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করা হলে অজুফার ছেলে সৈয়দ ইমাম হোসেন রাজু বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে কামরুন্নেছার কাছ থেকে জমিটি কিনেছি। ২০০০ সালে এটি রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ জমির হোল্ডিং নম্বর, খাজনা, করসহ সব কাগজপত্র নবায়ন করা হয়েছে। আমরা নতুন করে কোনো জায়গা দখল করিনি।
শুধু রসুলপুরই নয়, কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো করে নদী দখল করছে। কেউ নদীর পাড়-সীমানা দখল করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন স্থাপনা, কেউ আবার নদীর তির দখল করে গড়ে তুলছে ইট, বালু, পাথর ও কয়লা বিক্রির ডিপো ও লঞ্চ তৈরির ডকইয়ার্ড। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে ওঠা রসুলপুর চর, মোহাম্মদপুর চর, দপদপিয়ার চর, কর্ণকাঠী চর, পলাশপুর চর, খোন্নারের চর এবং চর বাড়িয়ার চর এবং দপদপিয়া ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকা দখল করেছে প্রভাবশালীরা। এরপরও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য কীর্তনখোলা নদীর তিরের ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু ৫৬ বছরেও সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
এর ফলে অধিকাংশ সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল করে নেন প্রভাবশালীরা। নৌবন্দরের উত্তর দিকে জেল খালসহ রসুলপুর এলাকায় ২৮ একরের মধ্যে ২০ একর বেদখল হয়ে আছে। বরিশাল নৌবন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তির বিআইডব্লিউটিএ’র।
বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দরসংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তিরে উচ্চ জলরেখা থেকে তিরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তিরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে, যার অর্ধেকই বেদখলে চলে গেছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে কীর্তনখোলার দখলকারী ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া একটি তালিকা তৈরি করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সূত্র জানায়, ৩-৪ বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে ১০ একর ৮২ শতাংশ জমি পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যায় বিআইডব্লিউটিএ’র। এছাড়া পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তসংলগ্ন এলাকার কয়েক একর জমি মৌজার নাম পরিবর্তনের কারণে বেদখলে রয়েছে। একইভাবে ১ একর ২৭ শতাংশ জমির ওপরে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা পার্ক স্থাপন করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। যদিও বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি, পার্ক নির্মাণ হলেও এ জমি তাদের দখলেই রয়েছে। এছাড়া ২ একর ৫৭ শতাংশ জমি নদীতে বিলীন হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌবন্দর ও পরিবহণ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, নতুন করে জমি দখলের খবরটি আমার জানা ছিল না। এখন শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দখলদারদের ডেকে আনা হবে। পরে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া নগরীর আমানতগঞ্জ খাল থেকে রূপাতলী দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তির বিআইডব্লিউটিএ’র। নদী তিরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তিরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে, যার অর্ধেক বেদখল হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দখলদারদের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে। নদীর জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে জরিপ চলছে। দখলদারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন এবং জমি জরিপ কার্যক্রম শেষ হলেই তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া তালিকা তৈরি করা হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।