কীর্তনখোলায় পলিথিনে আটকে গেছে ড্রেজিং
দুদিন ধরে বন্ধ বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকার খনন
সাইদুর রহমান পান্থ, বরিশাল
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশালের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীখননে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন। ড্রেজার চালালেই পলিথিনে আটকে যায় মেশিন। এ কারণে বারবার পলিথিন সরিয়ে খননকাজ করতে হচ্ছে ড্রেজিং বিভাগকে।
পলিথিনের কারণে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকার নদীখনন। শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট রোধে প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসেম্বর থেকে নদীখনন শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। তবে সঠিক নিয়ম না মানা বা সমীক্ষা ছাড়া এই ড্রেজিংয়ের সুফল বেশি দিন থাকছে না বলে দাবি নৌযানচালক ও মাস্টারদের।
অভিযোগ রয়েছে, যেটুকু গভীরে খনন করার কথা ছিল, তা করছে না ড্রেজিং বিভাগ। জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়া বিভিন্ন নদীর ৪৭টি পয়েন্টে খনন শুরু হয়েছে। ১১টি নদী থেকে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলনে ব্যয় হবে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কীর্তনখোলায় বরিশাল নৌবন্দরে ১ লাখ ঘনমিটার বালু খনন চলছে।
বন্দরের কাছেই ড্রেজিং চলে ২০ থেকে ২৫ দিন। কিন্তু এখানকার খনন শেষ হচ্ছে না। পুরো এলাকায় পলিথিনের একটি স্তর পড়ে গেছে। যার কারণে খনন শুরু করলেই এতে আটকে যায়।
বিভিন্ন লঞ্চের মাস্টাররা বলেন, ড্রেজিং বিভাগ এই খনন করে, আবার দুই-তিন দিন খবর নেই। এভাবেই চলে আসছে। কোনো কোনো সময় দেখা যায়, তারা যে খনন করে, তাতে বালুর পরিবর্তে মাঝেমধ্যে সাদা পানি বেরিয়ে আসে। এর মানে হচ্ছে তারা দেখে-শুনে ড্রেজিং করছে না। ফলে টেকসই ড্রেজিং হচ্ছে না।
আবার পলিথিনের দোহাই দিয়ে কাজ বন্ধ করে রেখেছে। অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. আলমাস দেওয়ান বলেন, ঢাকা বরিশাল নৌ রুটের হিজলা ও বাবুগঞ্জ এলাকায় পানি কম। সেখান থেকে লঞ্চ পরিচালনা করতেই কষ্ট হয়। এছাড়া কালীগঞ্জে পানি কম থাকায় সেখানেও সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, নদীতে সঠিকভাবে জরিপ না করায় ড্রেজিং করার কারণে আমরা সুফল পাই না। একইভাবে বরিশাল লঞ্চঘাটে বারবার খনন হলেও সুফল আসে না।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন বলেন, ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে। পলিথিনের কারণে বরিশাল লঞ্চঘাটে খনন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া বালু বা পলি কেটে নগরীর ধান গবেষণা এলাকায় ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটার পাইপলাইন করতে সমস্যা হওয়ায় এখন খননকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কাল বা পরশুর মধ্যে ফের পুরোদমে এই কাজ করা হবে।
বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, পরিকল্পিত খননের অভাবে কীর্তনখোলায় বরিশাল নৌবন্দরটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বন্দরের উত্তরে বিশাল চর। যে কারণে বন্দর এলাকায় পানি কমে যায়। আর পলিথিন পুরো এলাকায় রয়েছে। সেটাও খননে বাধার সৃষ্টি করে।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খননকাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কেন বন্ধ বা কী হয়েছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অন্য মাধ্যমে শুনেছি। লঞ্চঘাট এলাকায় ড্রেজিং করতে কষ্ট হচ্ছে। খনন শুরু করলেই ড্রেজারে পলিথিন প্যাঁচিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভুইয়া বলেন, পলিথিনের কারণে আমরা কাজ আগাতে পারছি না। আমাদের কাজের ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকার মধ্যে বাকি শুধু রসুলপুর বস্তিসংলগ্ন চরের মাথা ও জেল খালের এলাকা।