Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি সময়ে গম আমদানি

আমদানিকারকদের দুই দিক থেকে লাভ * মেয়াদোত্তীর্ণ আটায় অধিকাংশ বেকারি বিস্কুট তৈরি হয়

Icon

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি সময়ে গম আমদানি

অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনতে মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি সময়ের গম আমদানিতে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে পৌঁছানোর কয়েকদিনের মাথায় এসব গমের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ গম দ্রুত ভেঙে আটা-ময়দা করে বিক্রি করা হয়।

পাশাপাশি অধিকাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ আটা-ময়দায় তৈরি হয় নিুমানের পাউরুটি ও বিস্কুট, যা বাজারজাত করা হয়। এতে থাকছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এছাড়া কম দামে গম আমদানির মাধ্যমে উচ্চমূল্যে আটা-ময়দা বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর, গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।

জানা যায়, ভাত ছাড়া সব খাদ্যদ্রব্যই আটা-ময়দা থেকে তৈরি। দেশে চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ অর্থাৎ ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মেট্রিক টন গম প্রতিবছর বিদেশ থেকে আমদারি করা হয়। এছাড়া গমের সঙ্গে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভুট্টা মেশানোর অভিযোগও রয়েছে আটা প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে। তবে উচ্চবিত্তের ব্যবহার ও উন্নতমানের বেকারি বিস্কুট তৈরির জন্য উন্নতমানের গমও দেশে আমদানি হয়। তবে তা পরিমাণে খুবই কম।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর গমের চাহিদা ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ১২ লাখ মেট্রিক টন। আমদারি করতে হয় প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। সরকারিভাবে আমদানি করা হয় ছয় থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন। প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন গম বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বমানের গম ধনী দেশগুলো কিনে নিচ্ছে। মূল্য যাই হোক তারা ওই গম হাতছাড়া করে না। মাঝারি মানের গম নিয়ে যায় মালয়েশিয়া, কোরিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সেই গমের লাগামও পাওয়া যায় না। আর নিুমানের মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি পর্যায়ের গমগুলো দেশে আমদানি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ রয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তারা তথ্য আদানপ্রদান করেন। ফলে তারা কম মেয়াদি গমের এলসি করেন। এতে দামে কম, লাভ বেশি। তারা আরও বলেন, দেখবেন আটার প্যাকেটে সর্বোচ্চ এক মাস সময় থাকে। আবার ২০-২৫ দিন মেয়াদের আটাই বাজারে বেশি পাওয়া যায়। অনেক দোকানি সাধারণ ক্রেতাদের মেয়াদোত্তীর্ণ আটার প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ মেয়াদ দেখে আটা ক্রয় করে না। এই সুযোগ বিক্রেতারা লুফে নেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ আটা কোম্পানি নদীতে ফেলে দেয় না। মেয়াদোত্তীর্ণ আটা বেকারিতে বিক্রি হয়। এ কারণে অধিকাংশ বেকারি আইটেম খেলে পেটে পীড়া হয়। তারা আরও জানান, দেখবেন বাজার হরেক রকমের বি¯ু‹ট পাওয়া যাচ্ছে। আগে তো এত বিস্কুট ছিল না। এখন কেন এত বিস্কুট কোম্পানির উদ্ভব হলো? তারা আরও বলেন, উন্নত মানের আটা-ময়দায় ভালো বি¯ু‹ট ও বেকারি আইটেম তৈরি হয়। কিন্তু সেগুলো আমজনতার নাগালের বাইরে থাকে।

নিুমানের গম আমদানি বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম যুগান্তরকে বলেন, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি পর্যায়ের গম আমদানি হয়, সেটা মোটামুটি অনেকেই জানেন। তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভুট্টা গমের সঙ্গে মেশানোর খবর আমরাও শুনি। কিন্তু লিখিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। মূল্যবোধহীন অপবাণিজ্যের কারণেই এটা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আঞ্চলিক গম ও ভুট্টা গবেষেণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, দেশে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। চাহিদার বিপরীতে এটা সন্তোষজনক। তিনি আরও জানান, ৭০ শতাংশ গমের সঙ্গে ৩০ শতাংশ ভুট্টা মিশিয়ে আটা তৈরি করা হয়। এটা ওপেন সিক্রেট। বেশি মেশালে রুটি ফেটে যাবে। তাই নির্দিষ্ট মাত্রায় মেশানো হয়। কারণ ভুট্টার কেজি ৪০ টাকা আর গমের কেজি ৫৫ টাকা। ফলে মিল মালিকরা লাভবান হন। তবে এতে ক্ষতি নেই। কারণ বিদেশ থেকে আমদানি করা গমের চেয়ে ভুট্টার মান শতগুণ ভালো। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না। বরং ভালো। তবে কোম্পানির লাভ হচ্ছে। তিনি আরও জানান, দেশে গমের উৎপাদন দিনদিন কমে যাচ্ছে। কারণ, গম ১২০ দিনে আহরণ উপযোগী হয়। পক্ষান্তরে বিভিন্ন ধরনের সবজি, সরিষা, আলু, মিষ্টি আলুজাতীয় ফসল ৮৫ থেকে ৯০ দিনে আহরণ করা যায়। এসব ফসল লাভজনকও। এছাড়া গম দেরিতে পাকে। ফলে বোরো রোপণ করতে দেরি হয়। দেরিতে রোপণ করা বোরো আহরণের সময় ঝড়বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দেয়। ফলে কৃষক এখন আর গম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ময়দা বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহসভাপতি ইছা বাবুল যুগান্তরকে বলেন, আমদানিকারকদের সঙ্গে আমরা পারছি না। তারা মেয়াদ শেষের দিকের গম আমদানি করে এবং বাজারজাত করেন। তাদের হাত অনেক লম্বা। তিনি আরও জানান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদারি করা উন্নত মানের গম থেকে আটা-ময়দা তৈরি হয়। তার মতে, বাজার এখন নিুগামী। মৌলভীবাজারের খুচরা বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম জানান, ভালোমানের আটা সর্বোচ্চ ৬০ টাকা বিক্রি করি। ৫০ কেজির বস্তা খুললে কমপক্ষে ১ কেজি ঘাটতি হয়। এ সঙ্গে প্যাকেট, পলিথিন ও লেবার কস্ট যোগ হবে। সব যোগ করে খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা পড়ে। আর নিুমানের আটা বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে। সেগুলো বেকারিতে বিক্রি হয়। ওই আটা বেকারি আইটেমে ব্যবহার হয়। তিনি আরও জানান, দুই মাস আগে ২ কেজির প্যাকেট ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অনেকের কাছে বেশি দামের আটা অবিক্রীত রয়ে গেছে। সেসব আটা এখনো উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন বেশি দামে আটা বিক্রি হলে এটা ক্রেতার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি গম আমদানি হয়। এটা দুঃখজনক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম