শেবাচিমে এক সপ্তাহে সাত শিশুর মৃত্যু
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হাড় কাঁপানো শীতে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিসে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগে এক সপ্তাহে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে বিপুলসংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ সম্পর্কে ব্যুরোর পাঠানো খবর :
বরিশাল : শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে দেড় শতাধিক শিশু চিকিৎসাধীন। সেবা নিশ্চিত করতে এখানে ৭১টি বেড বাড়ানো হলেও এক সিটে দুই শিশুকে রেখে সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেবা ব্যাহত ও ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের পাঁচ চিকিৎসক ও ১৫ নার্স সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। শেবাচিম হাসপাতালে গত সপ্তাহে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্র জানায়-এক সপ্তাহে অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই হাজার শিশু ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছে। এর বাইরে বহির্বিভাগ ও আইসিইউ থেকে হাজারখানেক শিশু সেবা নিয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ৩৬টি বেড থাকলেও চাপ সামলাতে আরও ৭১টি বেড যুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিদিন রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগী সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এক সিটে দুই শিশুকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
রোগীর স্বজন আবদুর রাজ্জাক জানান, চিকিৎসক ও নার্সরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এক সিটে দুজনকে সেবা দেওয়ায় শিশুরা সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ কারণে আসন সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সুপ্তি জানান, হঠাৎ করে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন-রাত সেবা দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটে আমরা পৃথক শিশু ওয়ার্ড চালু করতে পারছি না। অল্পদিনের মধ্যে তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগ সরিয়ে সেখানে ১০০ বেডের ব্যবস্থা করা হবে। শিশু ওয়ার্ডের ১ ও ২ ইউনিট সেখানে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া নগরীর আমানতগঞ্জে সুকান্ত শিশু হাসপাতালটি চালু হলে শেবাচিমে শিশু রোগীর চাপও কিছুটা কমবে।
কুমিল্লা : হাড় কাঁপানো শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে কুমিল্লায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার সবকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীরা বেশি ভিড় করছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ড এবং সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগে বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগম ঘটছে। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, শত শত রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন। এতে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে আমরা চিকিৎসকদের অতিরিক্ত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। ১৭টি উপজেলার ১৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। বাড়তি ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন, নেবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (শিশু) নাজমুস সিহান বলেন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা ডায়রিয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে বমি করে এবং শরীর নেতিয়ে পড়ে। শরীরে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। ছয় মাসের শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের বেশি হলে ডাবের পানি, চিড়া ধোয়া পানি, ওরস্যালাইন, কাঁচকলার তরকারি খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া আদা ও লেবুসহ গরম পানি পান করাতে হবে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।