দরিদ্র-ছিন্নমূলদের পাশে নেই জনপ্রতিনিধিরা
রাজশাহীতে শীতবস্ত্রের কষ্টে দরিদ্র মানুষ
পবার হুজুরিপাড়ায় ১০ হাজার দিনমজুরের জন্য মাত্র দেড়শ কম্বল
তানজিমুল হক, রাজশাহী
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কনকনে শীত। দিনভর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে আকাশ। দেখা মিলছে না সূর্যের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপছে মানুষ।
শুধু রাতেই নয়, দিনেও মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দুই সপ্তাহ ধরে রাজশাহীতে বিরাজ করছে এই অবস্থা। শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারিভাবে কিছু কম্বল বিতরণ করা হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে নেই। সরকারি কম্বলও জনসংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য। পবা উপজেলার হুজুরিপাড়া ইউনিয়নে ২০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই দিনমজুর। সেখানে কম্বল গেছে মাত্র তিনশ পিস।
জানা যায়, রাজশাহীতে জানুয়ারির প্রথমদিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় দিনে তা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। তৃতীয় দিন ১৩ ডিগ্রি থাকলেও শীতের অনুভূতি ছিল অনেক বেশি। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আগামী দু-একদিনে আরও কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী মহানগরীর বড়বনগ্রাম এলাকার রিকশাচালক আব্দুল হামিদ বলেন, কয়েক দিনের শীতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। ফলে রিকশার যাত্রী কমে গেছে। তাছাড়া কনকনে ঠান্ডায় প্রতিদিন চালাতেও মন চায় না। এতে আয় রোজগার কমে গেছে। টাকার অভাবে খাবার ও শীতবস্ত্র কিনতে পারছি না।
পবা উপজেলার ভালাম এলাকার দিনমজুর আব্দুস সালাম বলেন, আমরা মাঠে কাজ করি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত শীতের কারণে কাজ করতে পারছি না। শীতবস্ত্র না থাকায় পরিবারের শিশুরা খুব কষ্টে আছে।
উপজেলার হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি মাত্র তিনশ কম্বল পেয়েছি। আমার ইউনিয়নে ২০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই দিনমজুর। তারা দিন আনে দিন খায়। তারা কিভাবে শীতবস্ত্র কিনবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে কিছু কম্বল ইউনিয়ন পরিষদের কাছে এসেছে। সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। একটি ইউনিয়ন পরিষদে ৩৫-৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। সেখানে কম্বল পাওয়া যাচ্ছে মাত্র দেড় থেকে দুইশ।
বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ১৪ হাজার জনসংখ্যা। কিন্তু আমি সরকারিভাবে এবং কিছু বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে মাত্র চারশ কম্বল পেয়েছি। আমার ইউনিয়নে নিম্ন আয়ের মানুষই রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার।
বাঘা উপজেলার আড়ানী নুরনগর গ্রামের দিনমজুর সাধন প্রামাণিক বলেন, গত বছর শীতে সাংবাদিকের মাধ্যমে একটি সোয়েটার পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার তাও পাইনি। ভ্যানচালক জাহিদ ও দিনমজুর রাহেলা বলেন, আমাদের দিকে কেউ কোনোদিন খেয়াল করে না। অনেকবার এলাকার নেতাদের বলেও লাভ হয়নি।
আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক রফিকুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার মানুষ। সরকারিভাবে মাত্র ৩৫০ পিস কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। এগুলো অতি গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্রের বরাদ্দ নেই। তবে নিজের অর্থায়নে যতটুকু পেরেছি, শীতার্ত মানুষকে দিয়েছি।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। লংকা বাংলা ফাউন্ডেশনের দেওয়া প্রায় তিন হাজার কম্বল বিতরণ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, নভেম্বরেই মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীতে ৫৬ হাজার ৮৫০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড, ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৩টি পৌরসভায় বিতরণ করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে যে শীত, তাতে এত স্বল্পসংখ্যক কম্বল দিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আরও শীতবস্ত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেগুলো এলেই সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।