সীমিত পরিসরে এলসি, রোজায় শঙ্কা চিনিতে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রমজানে চিনির চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত এলসি কম খোলা হয়েছে, যা রোজার বাজারকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয় ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’ বৈঠকে।
সেখানে আরও বলা হয়, সরকারের নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া নিত্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো সীমিত পরিসরে এলসি খুলছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
রোজায় চিনির চাহিদা প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় মাস আগে বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানির এলসি কম খোলা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আমদানির এ ঘাটতি রোজার মধ্যে পড়বে।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বর্তমানে দেশে চিনির দাম বেশি। এ অবস্থায় রমজান সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আমদানি শুল্ক কমাতে চিঠি দেওয়া হবে। যাতে রোজা উপলক্ষ্যে চিনির ওপর আরোপিত শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হয়। এলসি খোলার সমস্যা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হবে। আশা করি, সমস্যা অতিক্রম করা যাবে। মন্ত্রণালয় এলসি খোলার বিষয়ে অবশ্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে।
সহায়তার ধরন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো ব্যবসায়ী এলসি খুলতে চান; কিন্তু ব্যাংক সেটা খুলছে না-আমাদের সেটি জানালে ওই এলসি খোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অনুরোধ করবেন সচিব। যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর এলসি খুলে দেওয়া হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার সুবিধার্থে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হবে। এর আগে আমাদের এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা করে দেখতে হবে কী পরিমাণ ডলার প্রয়োজন।
এ সময় বাণিজ্য সচিব (সিনিয়র) তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এটা একটা বিষয়। আরেকটা হচ্ছে অনেক সময় এলসিবিহীনও আমরা অনুমতি দিতে পারি। এলসিবিহীন যাতে পণ্য আনা যায়। সেরকম পরিস্থিতি হলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব। এলসি ছাড়া কীভাবে (আমদানি) করা যাবে-জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা করা যায়। ছোটখাটো খুব প্রয়োজনীয় হলে আমরা সেটি দিতে পারি। ভোজ্যতেল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও স্থির থাকতে হবে। তবে এখন বিনিময় হার গতি দেখে মনে হচ্ছে ভালোর দিকেই যাচ্ছে।
‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’ বৈঠকে রমজানকে সামনে রেখে অতিপ্রয়োজনীয় ৭টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে সামনে রোজা। সেখানে মজুত ও আমদানির তথ্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, পর্যালোচনা করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, মোটামুটিভাবে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে চাহিদা মোতাবেক ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, চাল-গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ব্যবস্থাপনার অভাব, কালোবাজারি ও অতিমুনাফা লাভের প্রত্যাশার কারণে বাজার খারাপ হচ্ছে-এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আলোচনা করেছি। সমস্যাগুলো আছে বলেই সেটা নিয়ে প্রথম পর্যায়ে দাম নির্ধারণ, দ্বিতীয়ত সেই দাম বাজারে কার্যকর, তৃতীয় কেউ উচ্চলাভের আশায় মজুতদারি করেছে কি না সেটিও মনিটরিং করা হবে। তবে এটিও সত্য-একটু সংকট হলে বড় করে সেটাকে দেখিয়ে কেউ কেউ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে বলতে চাই, পণ্যের যথেষ্ট পরিমাণ (মজুত) আছে। সামনের দিকে এলসি খোলার যথেষ্ট চেষ্টা চলছে। রমজানে সমস্যা হবে না।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) এর চেয়ারম্যান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ ব্যবসায়ী, আমদানিকারক।