লাইনে ফানুস আটকা মেট্রো চলাচল দুই ঘণ্টা বিঘ্নিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈদ্যুতিক লাইনে ফানুস আটকে থাকায় রোববার দুই ঘণ্টারও বেশি সময় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ফানুস সরানোর পর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে মেট্রো চলাচল আবার শুরু হয়। শনিবার রাতে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে ওড়ানো ফানুসগুলোর বেশ কয়েকটি মেট্রোরেলের বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটিতে আটকে যাওয়ায় মেট্রোরেল চলাচল বিঘ্নিত হয়।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানায়, সকালে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে আসার পর ফানুস পড়ে থাকার বিষয়টি নজরে আসে। রেললাইন থেকে উঁচু তারে আটকে থাকা কোনো কিছু সরানোর জন্য একধরনের স্বয়ংক্রিয় মই উত্তরায় আছে। এ মইবাহী যান রেললাইন ধরে চালানো যায়। যেহেতু একটি ট্রেন উত্তরা থেকে ছেড়ে এসে লাইনে দাঁড়ানো ছিল। সে জন্য মইটি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। কর্মীরা বড় লাঠির সাহায্যে ফানুসগুলো নামিয়েছেন। এ জন্য সময় লেগেছে বেশি।
ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানায়, ঢাকার মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদুৎচালিত। ঝুলন্ত তারের সঙ্গে ট্রেনের সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহণ হয়। এ ব্যবস্থায় ফানুস, ঘুড়ি, কাপড় অথবা এ জাতীয় বস্তু আটকে গেলে বিদ্যুৎ পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হয়, যা থেকে মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ডিএমটিসিএল আরও জানায়, মেট্রোরেলের লাইনের দুপাশে খুঁটি দিয়ে তার টানিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে। একে ক্যাটিনারি সিস্টেম বলা হয়। এ তার থেকে প্যান্টুগ্রাফ নামের যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রেনে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়। প্রতিটি ট্রেনে চারটি করে প্যান্টুগ্রাফ থাকে। মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সূত্র বলছে, কপারের মধ্যে প্লাস্টিক অথবা কাপড় জাতীয় বস্তু আটকে থাকলে তা দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) হতে পারে। এতে দুর্ঘটনা না হলেও পুরো ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফানুস ছাড়াও মেট্রোরেল লাইনে আশপাশের বাড়ির ছাদ থেকে বাতাসে উড়ে আসা কাপড়ও পাওয়া গেছে। ছাদে কাপড় শুকাতে দিলে শক্ত করে ক্লিপ দিয়ে আটকে দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, কেউ কেউ আতশবাজিও ছুড়ে মেরেছে রেললাইনের দিকে। এ জন্য শুরুতে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়। এরপর লাইন, তার এবং অন্যান্য স্থাপনা থেকে ফানুস ও অন্যসব বস্তু সরানো হয়। ফানুসের সংখ্যা না বলতে পারলেও ওই কর্মকর্তা জানান, কয়েক বস্তা ফানুস ও অন্যান্য বস্তু অপসারণ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, পুলিশ ফানুস না ওড়াতে আগের দিন মাইকিং করেছে। তিনি নিজে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে মেট্রোরেলের পাশে ফানুস ও ঘুড়ি না ওড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ঢাকাবাসীকে এগুলো মানতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি হলে তো দেশেরই ক্ষতি। এ বিষয়টি ঢাকাবাসীকে একটু বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দিল্লিতে মেট্রোরেলের লাইনসংখ্যা বেশি। তাই সেখানে ফানুস, এমনকি ঘুড়িও ওড়াতে দেওয়া হয় না।
ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে : উদ্বোধনের পর দিন থেকে জনসাধারণের জন্য সীমিতভাবে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে পুরোদমে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। উত্তরা-আগারগাঁও পথের জন্য ৬ কোচবিশিষ্ট ১০টি ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে। তুরাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, যতই দিন গড়াচ্ছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে মেট্রোরেলের স্টেশনসহ আশপাশের এলাকা। উদ্বোধনের পর থেকে দিনের অর্ধবেলা পর্যন্ত মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রী সমাগম হচ্ছে। এর বাইরে বাকি সময়জুড়ে স্টেশন ঘিরে বাড়ছে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা। আগতরা মেট্রোরেল চলাচলের সড়কের নিচের রাস্তা ও সিঁড়ির নিচের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, মেতে উঠছেন খোশগল্পে। বছরের প্রথম দিন হওয়ায় স্টেশনজুড়ে ঘুরতে আসা মানুষদের সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। দুপুরের পর থেকে মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেন না চললেও স্টেশনের আশপাশজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কয়েকশ মানুষ।