Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

জরুরি পরিস্থিতির ধোঁয়া : ইন্টারনেট বন্ধে এসওপি

হুমকির মুখে নাগরিক অধিকার

এ ধরনের সিদ্ধান্ত হঠকারী জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক : মহিউদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন * কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না: ইমদাদুল হক, সভাপতি, আইসএসপিএবি * সরকার কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নয়: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, পলিসি অ্যাডভাইজার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ

সাইফুল আহমাদ (সাইফ)

সাইফুল আহমাদ (সাইফ)

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জরুরি পরিস্থিতি বা বিশেষ অবস্থার দোহাই দিয়ে আবারও ইন্টারনেট বন্ধের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্যোগ চলছে। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি উভয়েই বলছে, তারা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নন, তবুও ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরির কথা বলা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, এ উদ্যোগ কার? ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার পথে থাকলেও কেন এবং কীভাবে এ শাটডাউন পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হচ্ছে? এর পেছনের মূল চালিকাশক্তি কারা? নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কোনো অবস্থাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করা উচিত নয়, তাহলে ‘জরুরি পরিস্থিতি’র ধোঁয়া তুলে এমন নীতিমালা তৈরির চেষ্টা কার স্বার্থে? সে প্রশ্নও তুলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়, যেখানে সুপারিশ করা হয়, একযোগে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল, তাই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ পরিমার্জন করে এ ধরনের ক্ষমতা নিষিদ্ধ করা উচিত। সেই সুপারিশেই গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিআরসিকে ‘জরুরি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বা সীমিত করার এসওপির খসড়া প্রস্তুত করতে’ বলে। তবে বিটিআরসি জানায়, ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে সরকারকে আগে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে, যে কোনো পরিস্থিতিতে এটি কার্যকর হবে এবং কে আদেশ দেবে।

বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ একে অপরের দিকে আঙুল তুললেও স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এর পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন-বিক্ষোভ দমন করতে ইন্টারনেট বন্ধের দৃষ্টান্ত রয়েছে। এবার কি সেটিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্যকর করার পথ তৈরি হচ্ছে?

এদিকে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয়। অধ্যাদেশের ২(ভ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটপ্রাপ্তির অধিকার সাইবার সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে।’

সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া হলেও এর পেছনে কারা সক্রিয় তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফলে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধের এসওপির বিষয়ে আইসএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক যুগান্তরকে বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা কখনোই চাই না ইন্টারনেট বন্ধ হোক। তিনি বলেন, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার বলা যায়। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা রাষ্ট্র জনগণের সে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। তবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে আঘাত আসে এমন কোনো পরিকল্পনা এড়াতে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কমপ্লিট শাটডাউনের বিপক্ষে আমরা। কেননা, ইন্টারনেট শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল থেকে শুরু করে নাগরিক সেবার কার্যক্রম সংযুক্ত। অতীতে আমরা দেখেছি, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়েছে, যার ফলে অনেক বাসাবাড়িতে অন্ধকার কাটাতে হয় নাগরিকদের। তাই সরকারকে বিকল্পব্যবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, যাতে নাগরিকদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধে যে এসওপি প্রস্তুতির কথা শোনা যাচ্ছে, যদি এটি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলব এটি জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু, তার পরিবর্তে ইন্টারনেট শাটডাউন পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এমন পদক্ষেপ নিতে চান, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নয়। বরং ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ইন্টারনেট বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেননি। জরুরি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বিটিআরসিকে এসওপি তৈরির নির্দেশনা কার পক্ষ থেকে এসেছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে। খুব শিগ্গির আমরা ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসাবে আইনগত স্বীকৃতি দিতে পারব বলেও জানান তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সরকার তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে উন্মুক্ত নীতির পক্ষে এবং জনগণের জন্য প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুতরাং, জনগণের স্বার্থের বিপরীতে যায় ইন্টারনেট বন্ধের মতো কোনো সিদ্ধান্ত তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআরসি ২০১২ সালে ঘোষণা দেয়, অফলাইনে মানুষের যেসব অধিকার রয়েছে, অনলাইনেও তা থাকতে হবে। ২০১৬ সালে তারা ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় এবং এটিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম