Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

ডেটিং অ্যাপের ফাঁদ, পা দিলেই সর্বনাশ

Icon

সাইফ আহমাদ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেটিং অ্যাপের ফাঁদ, পা দিলেই সর্বনাশ

সোয়াইপ করছেন, ম্যাচ হয়ে গেছে বা স্রেফ অ্যাপই ডিলিট করে দিয়েছেন -ডেটিং অ্যাপের সঙ্গে সম্পর্ক এ সময়ের খুব সাধারণ ঘটনা। অনলাইন জগতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ‘সোয়াইপ কালচারের ঢেউ তোলা’ অ্যাপগুলো। প্লে-স্টোর কিংবা অ্যাপস্টোরে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অ্যাপ। এখানে যতটা না নতুন সঙ্গী খুঁজে পায় তারচেয়ে বেশি পা দেয় পাতা প্রেমের ফাঁদে।

ফেক প্রোফাইলের ব্যবহার এবং প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে শারীরিক ও মানসিক শোষণ, বা আর্থিক প্রতারণার উদাহরণ কিন্তু কম নয়। এই ডেটিং অ্যাপ নিয়ে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্ল্যাকমেইলিং থেকে লোকেশন ট্র্যাকিং, তথ্য হাতিয়ে নেয়াসহ ডেটিং অ্যাপে অনেক ধরনের স্ক্যাম হয়।

চলতি বছরে পিউ রিসার্চের গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক টিন্ডার, গ্রাইন্ডার বা বাম্বলের মতো অ্যাপ ব্যবহার করেন প্রেম, সঙ্গী বা যৌনতার খোঁজে।

এ ছাড়াও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্টদের তুলনায় লেসবিয়ান, সমকামী এবং উভকামী লোকজনদের মধ্যে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা সামান্য বেশি দেখা গেছে। এরা সাধারণত টিন্ডার এবং গ্রাইন্ডারের ভক্ত।

ডেটিং অ্যাপের উত্থান

পৃথিবীর প্রথম ডেটিং ওয়েবসাইট হিসাবে ধরা হয় Match.com কে। যেটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নানা বিবর্তনের মাধ্যমে ভৌগোলিক অবস্থানভিত্তিক প্রথম ডেটিং অ্যাপটির লঞ্চ হয় ২০০২ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে। এলজিবিটিকিউ মানুষদের পারস্পরিক যোগাযোগের স্বার্থে প্রথম বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এই ‘PlanetRomeo’ অ্যাপটিই।

তারপর প্রযুক্তি-ব্যবসার প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক বিপ্লবের ফসল হিসাবে একে একে চলে আসে - OkCupid (2004), Grinder (2009), Badoo (2010), Flip (2010), QuackQuack (2010), Tinder (2012), Blued (2012), Hinge (2012), Bumble (2014), TrulyMadly (2014), Happen (2014), Woo (2014), Aisle (2014) প্রভৃতি ডেটিং অ্যাপগুলো। উদ্ধৃত সব ডেটিং অ্যাপই আমাদের দেশে কমবেশি ব্যবহƒত এবং জনপ্রিয়।

ডেটিং অ্যাপে কী খোঁজেন?

অনেকেই মনে করেন টিন্ডার অ্যাপটি ব্যবহারের লক্ষই হলো দ্রুততম সময়ে কাছাকাছি এলাকায় পছন্দসই যৌনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া। গবেষণা বলছে, অনলাইনে ডেট খোঁজেন এমন লোকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই আদতে খোঁজেন পছন্দসই জীবনসঙ্গী। ৪০ শতাংশ খোঁজেন ‘ক্যাজুয়াল ডেট’ -এরা স্রেফ সময় কাটানোর জন্য ডেট করেন, কোনো দীর্ঘমেয়াদি আশা ছাড়াই। প্রতি চার জনে একজন বা ২৪ শতাংশ চান যৌন সম্পর্ক, আর ২২ শতাংশ শুধু বন্ধুত্ব।

ডেটিং অ্যাপ থেকে একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হলো মিল­াতের (ছদ্মনাম)। কিছুদিন কথাবার্তা বলার পর আলাপ বেশ জমে উঠল। এরপর হলো দেখা করার পরিকল্পনা। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু দেখা করার পর মেয়েটি ছেলেটিকে নিয়ে একটি ঘরে যায়। বেশ খানিকক্ষণ পর সেখানে যান দুই পুলিশ সদস্য।

তারা জানান, কোনো সূত্র থেকে ফোন পেয়েছেন, ওই ঘরে একটি মেয়ের সঙ্গে বাজে কিছু ঘটছে। এরপর মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ছেলেটির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয় পুলিশ।

এমনকি হুমকি দেয় যে, কাউকে ঘটনার কথা জানালে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেবে। এ ঘটনার পরে ছেলেটি দমে না গিয়ে থানায় গিয়ে ঘটনার কথা জানায়। দেখা যায় সে সময়ে আসা পুলিশ আসলে পুলিশই নয় বরং চক্রেরই সদস্য ছিল।

এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। সেক্সটরশনের ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। প্রতারকরা ভুয়া পুলিশকর্মী সেজেও প্রতারণার ছক কষছে। আসলে ডেটিং অ্যাপে রয়েছে নানা ফাঁদ। নিরাপত্তা খুবই কম।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, (সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জা ও ভয়ে ভিক্টিম অভিযোগ করতে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভোগেন, অভিযোগ করতে চান না। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রতারণার স্বীকার ব্যক্তি নিজে যদি আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন সেক্ষেত্রে আমরা সঠিক আইনের প্রয়োগ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এসব ডেটিং অ্যাপে ইতিবাচক বিশেষ কিছু নেই বললেই চলে। বরং নেতিবাচকতায় ভরা। প্রায়ই এ ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারায় অনেকেই। এসব প্রতারণার ফাঁদ এড়িয়ে চলারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রেম না হোক ভালোলাগা, সেখান থেকে যোগাযোগ, তারপর বন্ধুত্ব এবং আরও কিছু বেশি। হ্যাঁ, এটাই আজকের ডিজিটাল যুগের ডেটিং-অ্যাপ। আজকের প্রজন্মের ক্ষেত্রে “Love at first sight” কথাটি ঠিক ততখানি প্রযোজ্য নয়, যতখানি প্রযোজ্য “Love at first swipe” কথাটি। এমনকি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে যথেষ্ট বিকল্পের সহজলভ্যতা থাকায় দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কিন্তু এত নেতিবাচক দিক থাকার পরও যে কথাটি বারবার ঘুরেফিরে আসছে তা হলো, এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমরা প্রত্যেকেই কি ক্রমশ এতই একা হয়ে পড়ছি যে, ডেটিং অ্যাপের ওপর আমাদের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে! অনেকেই তো আবার এগুলোকে নিছক টাইমপাসের উপকরণ হিসাবেই ব্যবহার করে থাকেন।

সচেতনতায় পরামর্শ

যাচাই করুন

টিন্ডার, বাম্বলের মতো অ্যাপগুলোতে প্রোফাইল যাচাই করার সুবিধা আছে। যদিও ভেরিফায়েড প্রোফাইল কিন্তু নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয় না, তবুও ভেরিফাইড প্রোফাইল থেকে জানা যায়, স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ছবিটি স্ক্রিনের অন্য পাশে বসে থাকা ব্যক্তিরই।

সবকিছু শেয়ার করবেন না

অনলাইনে কয়েকদিন কথা হতে শুরু করলেই তার সঙ্গে আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। কয়েকদিন পর থেকে অন্য পাশে থাকা ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে শুরু করতে পারে। সেক্ষেত্রে সেসব প্রশ্ন এড়িয়ে চলাই ভালো।

দেখা করার আগে ভাবুন

এ ছাড়াও ডেটিং অ্যাপে আলাপ হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে জনবহুল এলাকাই বাছতে হবে। তাদের ঠিক করা জায়গায়, তাদের বাড়িতে তো যাওয়া যাবেই না, সেই সঙ্গে নিজের বাড়িতেও ডাকা চলবে না। আলাপ হওয়া মানুষটির কাছ থেকে তার কাজকর্ম, ব্যাকগ্রাউন্ড ও পরিবার প্রসঙ্গে জানতে চাইতে হবে। সেগুলো ক্রস চেকও করা উচিত। কোনো তথ্য ভুল মনে হলে ব্লক করে দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম