
প্রিন্ট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩০ এএম
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা

মুহাম্মদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে, চিকিৎসার চেয়ে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাই উত্তম। তাই সুস্থ থাকতে প্রথম প্রয়োজন সতর্কতা। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করার উপদেশ দেন। তন্মধ্যে রোগব্যাধি আসার আগে সুস্থ অবস্থাকে (আল্লাহর নিয়ামত) মনে করার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে মানুষের জন্য গনিমত।
রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুহাজির সম্প্রদায়! এমন পাঁচটি অভ্যাস রয়েছে, সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যে পাওয়া না যায়, সেজন্য আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অশ্লীলতা। যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ পায়, তখন তাদের মাঝে প্লেগ ও বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করবে, যা তাদের পূর্বপুরুষ কখনো শোনেনি।
পরিবেশ যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখনই মানুষ নানামুখী সমস্যায় পড়ে। অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত হয়। পরিবেশের ক্ষতি ইসলাম পছন্দ করে না বরং তাকে গোনাহের কাজ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (অন্যায়-অনাচার-জুলুম থেকে) ফিরে আসে। (সূরা রুম)।
কুরআন-হাদিস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধারাও তাই প্রমাণ করে, মানুষ যেমন পাপাচার-অশ্লীলতার কারণে রোগাক্রান্ত হয়, তেমনি পরিবেশগত কারণেও এমন হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি (ইবনে মাজাহ)। মানব জীবনের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্যও সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক ও মানসিক শক্তি ছাড়া ইবাদতেও মন বসে না। হাদিসে এসেছে, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।’ (মুসলিম) হাদিসে এসেছে ‘অধিকাংশ মানুষেই দুটি নিয়ামতের বিষয়ে অসতর্ক ও প্রতারিত। ১. সুস্থতা এবং ২. অবসর (বুখারি)। এ ব্যাপারে প্রিয় নবি (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি? (তিরমিযি)।
রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। লোকদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা মহান আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য’ (আবু দাউদ)। হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখতে এসে তার হাত মুবারক আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি অন্তরে এর শীতলতা অনুভব করি। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছ। তুমি ছাকীফ গোত্রের হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও। সে (এ রোগের) চিকিৎসা করে’ (আবু দাউদ)। বিশ্বনবি বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা রোগ দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হারাম বস্তুতে আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ সুতরাং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য।
বিশ্বনবির এ হাদিসের আমল অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানিয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’ (ইবনে মাজাহ)। পরিমিত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হলে সব ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কারণ মাত্রাতিরিক্ত ভোজন ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এ রোগের ফলেই মানুষের হার্ট, কিডনি, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিস্টেমসহ সব গরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হতে থাকে। সুতরাং ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে হলে বিশ্বনবির ফর্মুলাই আরোগ্য থাকার অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীকে ইসলামি অনুশাসন মেনে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।