সৃষ্টির সেবায় মেলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি

মুফতী জিয়াউল হক
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মানুষ আল্লাহতায়ালার সেরা সৃষ্টি। পৃথিবীতে তারা আল্লাহর প্রতিনিধি। পৃথিবীর সবকিছু মানুষের ব্যবহার ও উপকারার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির সেরা হিসাবে মানুষ অন্যসব সৃষ্টির সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাববে। অনুরূপ মানুষ একে অপরের সুবিধা-অসুবিধাও দেখবে। সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি, ও পরিচর্যা দিয়ে একে অন্যের সমস্যাবলি দূর করবে। মানবসেবা মূলত এমনই এক সহমর্মিতার নাম, যাকে অন্যভাবে হক্কুল ইবাদত তথা বান্দার হক বলা যায়। মহান প্রভূ সৃষ্টি জীবের প্রতি কর্তব্যের কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহ যেমন সদয় হয়েছেন তোমরাও তেমনি সৃষ্টির প্রতি সদয় হও’। (সূরা কসাস : ৭৭)। মহানবি (সা.) মানবসেবার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন-‘তোমরা পৃথিবীবাসীর ওপর দয়া প্রদর্শন করো, তাহলে আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদের ওপর রহম করবেন।’ (তিরমিজি : ১৮৪৭)।
একমাত্র মানুষের প্রয়োজনার্থেই আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মানবসেবায় প্রকৃত ধর্ম। দরিদ্র ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে ইসলাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জন্য অনেক পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেন মহান প্রভূ এবং প্রকৃত মানব সেবক নবিজি (সা.)। ইসলামি শরিয়তে মানবসেবার অনেক ফজিলত রয়েছে। যেমন-
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : মানুষকে যেমন আল্লাহতায়ালা ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন তেমনি পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিও তার ভালোবাসার ফসল, সৃষ্টির প্রতি সদয় হলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেন : ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি যে তার পরিজনের প্রতিবেশী অনুগ্রহশীল।’ (মুসলিম)।
আল্লাহতায়ালার সাহায্য : মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষে এক মুহূর্তকালও বেঁচে থাকার কল্পনা করা যায় না। আর আল্লাহতায়ালা ততক্ষণই বান্দাকে সাহায্য করেন যতক্ষণ সে অপরের সাহায্য করে। এ সম্পর্কে নবিজি (সা.) বলেন : ‘ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ণ ব্যক্তির সেবা কর, ও বন্দি বা ঋণগ্রস্তকে মুক্ত কর। তাহলেই আল্লাহর সাহায্য আসবে।’ নবিজি (সা.) আরও বলেন ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সাহায্য করেন।’ (মুসলিম : ১৮৬৭)।
জান্নাত লাভের মাধ্যম : মানবসেবা জান্নাত লাভের পথ সহজ করে এবং এর মাধ্যমে বান্দা জান্নাতে বিপুল নেয়ামত লাভে ধন্য হবেন। মহানবি (সা.) বলেন : ‘কোনো মুসলিম কোনো মুসলিমকে পরিধেয় দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক পরাবেন, কেউ যদি অপর মুসলিম ভাইকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার দান করে আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, আর কোনো মুসলিম যদি অন্যকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করায় কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সিলমোহরযুক্ত শরাব পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)।
সদকার সমতুল্য : মানবসেবা সদকাতুল্য ইবাদত। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষ বা শস্য রোপণ করে আর সেখান থেকে কোনো মানুষ বা কোনো জীবজন্তু ভক্ষণ করে তাহলে সে ব্যক্তির জন্য তা সদকায় পরিণত হয়।’ (মুসলিম)।
ইমানের অঙ্গ : সৃষ্টির সেবা ইমানের একটি অঙ্গ। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘সে ব্যক্তি প্রকৃত ইমানদার নয় যে নিজের জন্য যা ভালোবাসে তা অন্যের জন ভালোবাসে না।’ (বুখারি : ১২)।