Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আলোর মানুষ হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)

Icon

মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলোর মানুষ হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)

বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) হেরা গুহার সাথি হিসাবে হজরত আবুবকর (রা.) ছিলেন সব সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব। যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় রেখেছিলেন সবার চেয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা। তার ভালোবাসা ও নবিপ্রেমকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি কখনো। আমলনামার দিক থেকে কেউই তার সমকক্ষ হতে পারেনি, পারবেও না। ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন সব ধন-সম্পদ।

যার দানের প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘ওইসব লোক যারা নিজেদের মধ্যে ধন-সম্পদ দান করে দিন ও রাতে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য পুণ্যফল রয়েছে, তাদের প্রতিপালকের কাছে। (সূরা আল বাকারাহ : ২৭৪)

৬৩০ সালে তাবুক অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। এতে সহায়তার জন্য রাসূল (সা.) মুসলমানদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে বলেন। অন্য সাহাবাদের মতো উসমান ইবনে আফফান (রা.) এতে প্রায় নয়শ উট এবং একশ ঘোড়া দান করেন। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রোম বাহিনীর মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের আগে প্রিয় রাসূল (সা.) সবার কাছে বলেন, যার যা সামর্থ্য আছে, সাধ্যমতো দান কর।

হজরত ওমর (রা.) বললেন, দুর্ভাগ্যবশত তখন আমার প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। আজ হয়তো সবার চেয়ে আমার দান প্রাধান্য পাবে। আমি আমার সম্পদ দু’ভাগ করে অর্ধেক নিয়ে এলাম এবং সাহাবারাও সাধ্যমতো আনল। রাসূল (সা.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? উত্তরে আমি বললাম, অর্ধেক রেখে এসেছি। ইতোমধ্যে হজরত আবুবকর (রা.) ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীসহ সমুদয় নিয়ে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সা.) বললেন, পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ঘরে আল্লাহ ও তার রাসূল ছাড়া আর কিছুই নেই।

নবিজির প্রেমে দান-দক্ষিণা এবং আল্লাহর পথে জীবনোৎসর্গের ক্ষেত্রে সিদ্দিকে আকবর ছিলেন অদ্বিতীয়। নবি (সা.)-এর নবুয়ত প্রকাশের আগেই সঙ্গী হিসাবে আবুবকরকে গ্রহণ করেন। আবুবকর প্রথম যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, অন্যান্য সবার ইসলাম গ্রহণের আগে তাদের মনে কিছু মাত্রায় দ্বিধা ছিল; কিন্তু আবুবকর বিনা দ্বিধায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইসলাম প্রকাশের পর যত প্রকার জুলুম-নির্যাতন হয়েছে সিদ্দিকি আকবরই ছিলেন সর্বাগ্রে। তিনি ছিলেন হিজরতের একমাত্র সাথি। হিজরতের রাতে হেরা গুহার ত্যাগের প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, আবুবকর সিদ্দিকের এক রাতের আমল আমার উম্মতের সব আমলনামা একত্রিত করা হলেও তাকে কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। হেরা গুহায় সিদ্দিকে আকবরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে রাসূল (সা.) আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন! তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছ, যখন লোকেরা আমাকে অবিশ্বাস করেছে। যখন লোকেরা আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তুমি আমার প্রতি ইমান এনেছ, যখন লোকেরা আমাকে অস্বীকার করেছে, তুমি আমায় সান্ত্বনা জুগিয়েছ, আমার উদ্বিগ্ন অবস্থায়। হে আল্লাহ, বেহেশতে আমার শ্রেণিতে আমার সঙ্গে আমার আবুবকর সিদ্দিককে রাখিও (যুরকানি আল মাওয়াহিব, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৬৩৫)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) একদা জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ সকালে রোজাদার হিসাবে উঠেছ? হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, আমি। অতঃপর রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে জানাজায় অংশগ্রহণ করেছ? হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, আমি। অতঃপর রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ কোন নিঃস্বকে খাইয়েছ?

উত্তরে বললেন, আমি। এবারও জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো রোগীকে দেখতে গিয়েছ? এবারও সিদ্দিকি আকবর (রা.) বললেন, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূল (সা.) বললেন, এসব গুণ যার মধ্যে একত্রিত হবে, সেই জান্নাতি। (সহিহ মুসলিম ও মিশকাত শরিফ) হজরত আবুবকর (রা.) রাসূল (সা.)-এর শুধু দুনিয়ার সাথি ছিলেন না, কবরের সাথি হয়ে আছেন এবং জান্নাতে ও হাশরের সাথি হবেন। হজরত আবুবকরের খেলাফত ২৭ মাস অর্থাৎ দুই বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী ছিল। এ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাকে বেশ কিছু অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং তিনি তা সফলভাবে মোকাবিলা করেন। নব্য নবি দাবিকারী বিদ্রোহীদের তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে দমন করেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধেও সফল অভিযান পরিচালনা করেন, যা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দের হিজরি ১৩ সনে ২২ জামাদিউস সানি ৬১ বছর বয়সে তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। তার ইন্তেকালের কিছুদিন আগে হজরত আলী (রা.)কে ডেকে বললেন, আমার ওফাতের পর তোমার সেই হাত দিয়ে আমাকে গোসল দেবে, যে হাতে তুমি রাসূল (সা.)কে গোসল দিয়েছিলে। আমার লাশ নবি কারিম (সা.)-এর রওজা শরিফের সামনে নিয়ে যাবে এবং সেখান থেকে কোনো ধরনের অনুমতি পেলে আমাকে নবিজির পাশে দাফন করবে, নতুবা অন্য স্থানে দাফন করবে। ওসিয়ত মোতাবেক গোসল, কাফন ও জানাজা শেষে সাহাবারা নবি (সা.) এর রওজা শরিফের দরজায় তার বহনের খাটিয়ে রাখলেন এবং হজরত আলী (রা.) সালাম দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনার পরম সাথি সিদ্দিকে আকবরকে আপনার পাশে চিরশায়িত হওয়ার অনুমতি দিন। কোনো ধরনের উত্তর পেলেন না। এভাবে দু’বার বলার পর তৃতীয়বার বলতে না বলতেই রওজা মোবারক থেকে আওয়াজ আসে ‘আদখিলুল হাবিবা এলাল হাবিবি, ফা ইন্নাল হাবিবা ইলাল হাবিবি মুশতাকুন’ অর্থাৎ তোমরা বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দাও, কেননা বন্ধু বন্ধুর মিলনের প্রত্যাশী। (খাসায়েসে কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ.২৮৯, তাফসিরে কবির, ৫ম খণ্ড, পৃ.৪৭৮) মহান আল্লাহ হজরত আবুবকর (রা.) এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের জীবন চলার পথের পাথেয় করে দিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম