Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ধর্মে নতুন রীতিনীতি পালনে সতর্কতা

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্মে নতুন রীতিনীতি পালনে সতর্কতা

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কাছে এটাই ইচ্ছা রাখেন, তারা যেন সব ধরনের সামাজিক কদাচার আর কুপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবলমাত্র আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশাবলি ও শিক্ষার ওপর আমল করে। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও রাসূলের সুন্নতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তারা তোমার এ আহ্বানে সাড়া না দিলে জেনে রাখ, তারা কেবল নিজেদের কামনা বাসানারই অনুসরণ করছে তারচেয়ে অধিক বিপথগামী আর কে হতে পারে যে আল্লাহর হেদায়াত ছেড়ে দিয়ে নিজ কামনা বাসনার অনুসরণ করে? আল্লাহ কখনো জালেম লোকদের হেদায়াত দেন না’ (সূরা কাসাস, আয়াত : ৫০)।

এ আয়াত স্পষ্টভাবে আমাদের সতর্ক করছেন আমরা যেন নিজ কামনা বাসনার অনুসরণ না করি। এছাড়া যারা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ না করে অন্য কিছুর অনুসরণ করবে তারা আল্লাহর হেদায়াত থেকে বঞ্চিত থাকবে। আর এমনটি যদি কেউ করে তাহলে সে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাইলেই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর বাহিরে কোনো কিছু গ্রহণ করতে বা সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারি না। যদিও বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ রয়েছে আর এটা থাকবে, আমাদের কাজ হলো প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অন্যদের সামনে তুলে ধরা। যারা ইসলামবিরোধী কাজে লিপ্ত তাদেরকে আমরা ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির এ পতাকা তুলে আনার চেষ্টা করতে পারি কিন্তু কোনোভাবেই তাদের ওপর অন্যায় আচরণ বা বাড়াবাড়ি করা যাবে না। কেননা আল্লাহপাক সবাইকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, ধর্ম নিয়ে জোরজবরদস্তির কোনো শিক্ষা আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসূল (সা.) কাউকে দেননি।

আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করে ভালো-মন্দ দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, যে ভালো পথের অন্বেষণ করবে সে আল্লাহর পুরস্কার লাভ করবে আর যে মন্দ পথ অবলম্বন করবে সেও তার মন্দের প্রতিফল পাবে। আমরা যদি সব ধরনের মন্দ থেকে নিজেকে দূরে রাখি তাহলে আমাদের আবাসস্থল হবে জান্নাত।

যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যে তার প্রভু প্রতিপালকের মর্যাদাকে ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে নিশ্চয় জান্নাতই হবে তার আবাস স্থল’ (সূরা নাজেআত, আয়াত : ৪০-৪১)।

কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষাবিরোধী কোনো কিছু করে বা ধর্মে সংযোজন করে তাহলে সেটি হবে বিদাত। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়ে এমন কোনো নব্য রীতির সূচনা করে ধর্মের সঙ্গে যার কোনোই সম্পর্ক নাই তবে সেই রীতিনীতি বা আচার-অনুষ্ঠান অগ্রহণীয় ও পরিত্যাজ্য’ (বোখারি, কিতাবুল সুলাহ)।

হজরত যাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উপদেশ দিচ্ছিলেন, তার (সা.) চোখ ছিল রক্তিম, কণ্ঠস্বর ছিল উঁচু, আর তার উত্তেজনাও বেড়ে গিয়েছিল। এমন লাগছিল যে, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণে অপেক্ষমাণ, এমন ভয়ই তিনি আমাদের দেখাচ্ছিলেন, তিনি (সা.) বলেন, ওই সেনাদল সকাল-সন্ধ্যায় যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণে উদ্যত। তিনি (সা.) আরও বলেন, আমার আগমন আর ওই মুহূর্তকালকে এমন সন্নিকটবর্তী করা হয়েছে এটা বলতেই সঙ্গে তিনি শাহাদত অঙ্গুলি আর এর সঙ্গের আঙুলটি একত্রে মিলিয়ে দেখালেন, যেভাবে এ দুটি আঙুল একত্রে মিলেমিশে আছে। আবার তিনি এ কথাও বলেন, এবারে আমি তোমাদের বলছি যে, সর্বোত্তম ধর্মীয় উপদেশ বাণী আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর পথ। সর্বনিকৃষ্ট হলো ধর্মে নব্য রীতিনীতির প্রচলন করা আর সেসব নব্যতা ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায়’ (সহি মুসলিম, কিতাবুল জুমুয়াতি)।

হজরত আমর বিন আওউফ (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের কোনো একটি সুন্নত এমনভাবে জীবিত রাখে যে লোকেরা তা অনুশীলন করতে থাকে এক্ষেত্রে আমলকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পুণ্যের সমপরিমাণ সুন্নতকে জীবিতকারী সেই ব্যক্তির পুণ্যে যোগ হতে থাকবে, আর এতে করে আমলকারী ব্যক্তিগণের কোনো একজনেরও পুণ্যের পরিমাণে কোনো কমতি হবে না। অপর দিকে যে ব্যক্তি কোনো নতুনত্বের সংযোজন ঘটায় আর লোকেরা তা করতে থাকে তা হলে এর ওপর আমলকারী সবার পাপের ভার তারই ওপর বর্তাবে। আর এতে সেই ব্যক্তিদের স্ব স্ব পাপের দায়ভারে কোনোই কমতি হবে না’ (সুনানে ইবনে মাজা, বাব মিনা মাহইয়া সুন্নাতা)।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সব ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে বেঁচে চলার এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার ওপর থেকে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

masumon83@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম