Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় নিয়ামত বাড়ে

Icon

আহাম্মদ উল্লাহ

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় নিয়ামত বাড়ে

শুকরিয়া বোধ না থাকলে মানুষের মনে শান্তি থাকে না। সব সময় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আর না পাওয়ার যন্ত্রণায় মন চঞ্চল হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারায় বান্দাদের কৃতজ্ঞ হতে বলেন। কেননা কৃতজ্ঞতা থাকলে, সেখান থেকে সন্তুষ্টি, আত্মতুষ্টি, শুকরিয়া বোধের জন্ম হয়। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সূরা ইবরাহিম আয়াত নং ৭)।

বান্দা যত বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, শুকরিয়া আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তত বরকতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। ব্যবসা, ধন-সম্পদ, সংসারে শান্তি, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে সময়ের সুসময় বণ্টনের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি দান করবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতদের শিখিয়েছেন সর্বাবস্থায় আল্লাহর রিজিক ও নিয়ামত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে। শুকরিয়া আদায় করতে। মুসলিম ও তিরমিজি শরিফে চমৎকার একটি হাদিস আছে এ নিয়ে।

হাদিসটি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে অর্থাৎ আল-হামদু লিল্লাহ পড়ে। (মুসলিম ২৭৩৪, তিরমিজি ১৮১৬)। কেননা আসমান ও জমিনের দুইয়ের মাঝে যা কিছু আছে সব মানুষের জন্য নাজিল করেছেন। একথা তিনি কুরআনে সূরা বাকারায় ঘোষণা করেন। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তিনিই জমিনে যা আছে, সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা-বাকারাহ : ২৯)। জমিনের নিয়ামত মানুষের ওপর তখনই বরকতময় হবে যখন সে শুকরিয়া আদায় করবে।

শুকরিয়া আদায়ে যেমন পুরস্কারের ঘোষণা আছে, অকৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য শাস্তিও আছে। যারা নিয়ামতের ব্যাপারে গাফেল, সৃষ্টির রহস্য দেখে-বুঝে, না দেখার-বুঝার ভান করে তাদের জন্য আছে লানত এবং কঠোর শাস্তি। পবিত্র কুরআনে সূরা কাহাফের ৩২-৪১ নাম্বার আয়াতজুড়ে আল্লাহতায়ালা একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। যারা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে দাম্ভিকতায় লিপ্ত হয় আল্লাহতায়ালা তাদের যুগে যুগে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন।

ঘটনাটি এমন-দুই ব্যক্তি যাদের আল্লাহ উর্বর বাগান দান করেছে। পরিপূর্ণ ফলবানসমৃদ্ধ বাগান, যার মাঝ দিয়ে নদী প্রবহমান। একজন দাম্ভিকতা নিয়ে বাগানে প্রবেশ করে অপরজনকে বলতে লাগল, আমার মনে হয় না এ বাগান কখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। কখনো কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং আর যদি হয় আমি এরচেয়ে ভালো আবাসস্থল পাব। প্রথমজনের দাম্ভিকতা দেখে দ্বিতীয়জন তাকে শুকরিয়া আদায় করতে বলে। সে বলল, যখন তুমি বাগানে প্রবেশ করলে তখন কেন বললে না ‘মাশাআল্লাহ’। অতপর তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় এবং ফলজভূমি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে আল্লাহতায়ালা নিয়ামত দিয়ে আবার কেড়ে নেন। আর কঠিন আজাবে পতিত করেন। আরেকটি ঘটনা ঘটে বনি ইসরাইলের সঙ্গে। সেটি আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারার ৫৮নং আয়াতে এ বর্ণনাই দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইল জাতির জন্য আসমান থেকে ‘মান্না ও সালওয়া’ দান করেছিলেন। যা ছিল আল্লাহর নিয়ামত। নিয়ামত পাওয়ার পরও তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না বরং বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি বের করার চেষ্টা করতে লাগল। আল্লাহতায়ালা তাদের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতি খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং নিজ ইচ্ছামতো চাষাবাদের সুযোগ করে দেন। দুটি ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা সর্বাবস্থায় শুকরিয়া আদায় করতে হবে।

কেননা আল্লাহ আমাদের এত পরিমাণ নিয়ামত দেন যা শেষ করার মতো নয়। সেটা রব নিজেই বলেন, ‘যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা নাহল, আয়াত ১৮)। দুনিয়া আর আখেরাত সাফল্য লাভের জন্য আমাদের অবশ্যই কৃতজ্ঞ হতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম