Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ঝগড়াবিবাদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ

Icon

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঝগড়াবিবাদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ

ঝগড়াবিবাদ শরিয়ত-নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডের অন্যতম। মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে ইসলাম। ঝগড়াবিবাদ ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না, যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)। ঝগড়াটে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে সেই লোক সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৫৭)। হাদিসটিতে এমন ব্যক্তির জন্য কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে, যে অতিমাত্রায় ঝগড়াবিবাদে লিপ্ত হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আর এমনকিছু লোক রয়েছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। তারা নিজের মনের কথার স্বপক্ষে আল্লাহতায়ালাকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক। যখন সে ফিরে যায়, তখন সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু ধ্বংসের চেষ্টা করে। আল্লাহতায়ালা অশান্তি ও দাঙ্গাহাঙ্গামা পছন্দ করেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২০৪-২০৫)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানবিহীন তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয়, সে তা থেকে নিবৃত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার অসন্তোষে থাকে।’ (কিতাবুস সামত, হাদিস : ১৫৩)। হজরত আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো সম্প্র্রদায় সঠিক পথের দিশা পাওয়ার পর পথভ্রষ্ট হয়ে থাকলে তা কেবল নিজেদের বিবাদ ও বাকবিতণ্ডায় জড়িত হওয়ার কারণেই হয়েছে। এরপর তিনি নিুোক্ত আয়াতটি পাঠ করেন, ‘তারা কেবল কূটতর্কের জন্যই এ দৃষ্টান্ত তোমার সামনে পেশ করে। প্রকৃতপক্ষে তারা কলহপ্রিয় লোক।’ (সূরা জুখরুফ, আয়াত : ৫৮; জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩২৫৩)। হজরত বেলাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, ‘যখন তুমি এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখবে যে বিতর্কপ্রবণ, নিজের মতামত নিয়ে গর্বিত এবং নিজেকে যুক্তিতর্কে জড়িয়ে রাখে, তাহলে জেনে রেখ, সে পরিপূর্ণ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। (শুয়াবুল ইমান, হাদিস : ৮৪৩৫)। ইমাম শা’বি (রহ.) বলেন, ‘তর্কবিতর্ক পুরোনো বন্ধুত্ব নষ্ট করে এবং দৃঢ় বন্ধন ছিন্ন করে দেয়।’ (শুয়াবুল ইমান : ৬/৩৪১)। হজরত ইবনে আবি লাইলা (রহ.) বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে কখনো তর্ক করি না। কারণ এতে হয় আমি তাকে মিথ্যা বলব, নয়তো রাগান্বিত করে দেব।’ (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ১৮৯)।

ধর্মীয় বিষয়ে বিবাদ

কেবল পার্থিব কাজকর্মে নয়, বরং সব ধরনের ধর্মীয় বিষয়েও ঝগড়াবিবাদ পরিহার করা উচিত। হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আলেমদের ওপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করার জন্য এবং জনসভায় বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা কর না। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে (জাহান্নামের) আগুন আর আগুন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৪)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তোমরা স্বীয় ভাইয়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক কর না। এর দ্বারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায় না এবং এর ক্ষতিকর ফলাফল থেকেও মুক্ত থাকা যায় না।’ হজরত আবুজর (রা.) বলেন, ‘ইমানের প্রকৃত দাবি হলো তর্কবিতর্ক পরিহার করা, যদিও ব্যক্তি সত্যবাদী হয়।’ হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘তোমার পাপের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তুমি সব সময় তর্কবিতর্কে লিপ্ত থাক।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তর্কবিতর্ক পরিহার করবে।’ হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘তুমি যদি তোমার ভাইকে ভালোবাস, তবে তার সঙ্গে তর্কবিতর্ক কর না।’ ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ‘জ্ঞান নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া হৃদয়কে কঠিন করে দেয় এবং হৃদয়-মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জ্ঞান নিয়ে তর্কবিতর্ক মানুষের হৃদয় থেকে জ্ঞানের আলো দূর করে দেয়।’ একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘যে ব্যক্তি সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, সে কি তা নিয়ে বিতর্ক করবে? ইমাম মালেক (রহ.) বললেন, না। বরং তাকে সুন্নাহ সম্পর্কে জানিয়ে দিতে হবে। যদি সে তা গ্রহণ করে, তাহলে তো ভালো। অন্যথায় চুপ থাকতে হবে।’ (আওজাজুল মাসালিক : ১/১৫; মাআরিফুল কুরআন : ৫/৪৩১)।

বিবাদে না জড়ানোর পুরস্কার

ঝগড়াবিবাদ পরিত্যাগ করার পুরস্কার জান্নাত। হজরত আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়াবিবাদ পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটা ঘরের জিম্মাদার।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)।

মোটকথা, আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময়গুলো অযথা তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয়ে বিনষ্ট করা অনুচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদের ঝগড়াবিবাদ পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম