আতিথেয়তা নবিদের সুন্নত। আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় ইবাদত। নবি (সা.)-এর ঘরে কেউ মেহমান হয়ে এলে তিনি সন্তুষ্টচিত্তে তাকে গ্রহণ করতেন। কখনো মেহমানদারির ব্যবস্থপনা না থাকলে মেহমানকে অন্য কোনো সাহাবির ঘরে পাঠিয়ে দিতেন। নবি (সা.) সাহাবিদের আতিথেয়তার প্রতি উদ্বুদ্ধ ও জোর তাগিদ দিতেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। (রিয়াদুস সালেহিন-৭১১)।
নবি ইবরাহিম (আ.) হলেন খলিলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধু। মানুষ তার প্রিয়জনের প্রশংসা করতে বা শুনতে পছন্দ করে। আল্লাহও তার খলিলের অসংখ্য ভালো গুণাবলি থেকে একটি বিশেষ গুণের কথা কুরআনের সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তা হলো নবি ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদারির ইতিবৃত্ত। আল্লাহর কাছে তার এমন উদারচিত্তে মেহমানদারির দৃশ্যটি বেশ ভালো লেগেছে। তাই নবি ইবরাহিম মেহমানের সঙ্গে যা যা করেছেন আল্লাহতায়ালাও হুবহু তাই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমার কাছে ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে সে বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইবরাহিম সংগোপনে তার স্ত্রীর কাছে গেল এবং একটি (ভুনা) মাংসল বাছুর নিয়ে এলো। তা তাদের সামনে রাখল এবং বলল, তোমরা খাচ্ছ না কেন? (সূরা যারিয়াত ২৪-২৭ আয়াত)।
অন্য আয়াতে এসেছে, সে [ইবরাহিম (আ.)] যখন দেখল, তাদের হাত তার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না (ফেরেশতারা খাবারের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন না), তখন সে তাদের অবাঞ্ছিত মনে করল। তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হলো। তারা বলল, ‘ভয় করো না। (আমরা ফেরেশতা) আমরা লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। [সূরা : হুদ, আয়াত : ৭০ (দ্বিতীয় পর্ব)]
আলোচ্য আয়াতে মেহমানদারির মূলনীতি ও পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। মেহমানদারি মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করে। সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ায়। পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ সৃষ্টি করে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রথম পৃথিবীতে মেহমানদারির প্রথা চালু করেছেন। বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মেহমানদারির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেক সময় অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে অনাহারে থাকতে হয়েছে। নিজ ঘরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে তিনি মেহমানদের কোনো ধনী সাহাবির বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। নবি হওয়ার আগে থেকেই তিনি অতিথি সেবায় সচেষ্ট ছিলেন। প্রথম ওহিপ্রাপ্ত হয়ে অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন মহানবি (সা.)। হজরত খাদিজা (রা.) তখন তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘আল্লাহর কসম, তিনি আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো রক্ষা করেন আত্মীয়তার বন্ধন, বহন করেন অন্যের বোঝা, উপার্জনক্ষম করেন নিঃস্বকে, আহার দেন অতিথিকে, সাহায্য করেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৩)।