Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

তওবায় মিলে নতুন জীবন

Icon

হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তওবায় মিলে নতুন জীবন

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। অর্থাৎ, তিনি দেখতে চান বান্দা তার স্মরণে ইবাদতে মগ্ন হয়, না তাকে ভুলে গুনাহে লিপ্ত হয়। এজন্য সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ভালো কাজের মতো মন্দ কাজেরও আকর্ষণ ও ক্ষমতা মানুষের মাঝে তিনি দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর একজন বান্দা হিসাবে আমাদের কর্তব্য, এ মন্দ আকর্ষণকে পরাজিত করে ভালো কাজের দিকে ছুটে চলা। মানব সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা। ইসলামি অনুশাসনে নিজের জীবন পরিচালনা করা। তবু আমাদের জীবনের এ জার্নিতে ছোট-বড় অনেক ধরনের গুনাহ হয়ে যায়। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, জেনে কিংবা না জেনে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বান্দা গুনাহ করবে, আল্লাহ শাস্তি দেবেন। অথবা ক্ষমা চাইলে মাফ করে দেবেন এটাই আল্লাহর রীতি। সুতরাং, মানুষের গুনাহ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে অস্বাভাবিক হলো গুনাহের ওপর অটল থাকা। মন্দ কাজ করতেই থাকা। এর থেকে ফেরার কোনো চেষ্টা না করা। ইসলামের শিক্ষা হলো কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা। কৃত ভুলের স্বীকারোক্তি দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করা। আল্লাহ এতে খুশি হন। বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কখনো অতিরিক্ত সওয়াব দান করেন। ওলামায়ে কেরাম সব গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব বা আবশ্যক বলেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার’। (সূরা নুর-৩১)। এখানে পরকালীন সফলতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার সুমহান সন্তুষ্টি, অসংখ্য নেয়ামতরাজি প্রাপ্তি এবং সর্বশেষ চিরকালীন জান্নাতে গমন উদ্দেশ্য। এগুলো অর্জনের পন্থা হিসাবে তওবা করতে বলেছেন। অন্য এক আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! আল্লাহর দরবারে তোমরা খাঁটি দিলে তওবা কর’। (সূরা তাহরীম ৮)।

তওবার ব্যাপারে নবিজি (সা.)-ও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে পাকে তিনি ইরশাদ করেন ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও এবং তার কাছে ক্ষমা চাও’। (মুসলিম ৪২, মুসনাদে আহমদ ৪/২৬১)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে উট হারিয়ে ফেলার পর যখন ফিরে পায়, তখন যেমন খুশি হয় আল্লাহতায়ালা তারচেয়ে বেশি খুশি হন, যখন কোনো বান্দা তওবা করে’। (বুখারি ও মুসলিম)। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যখন খুশি হন, তখন ক্ষমাও করবেন এটাই স্বাভাবিক।

আর তওবার জন্য আল্লাহতায়ালা বান্দাকে মৃত্যু বা কিয়ামত পর্যন্ত সুযোগ দিয়ে রেখেছেন। জীবনে যখন ইচ্ছা সে তওবা করতে পারে। তবে মৃত্যু এসে গেলে তওবা আর কোনো কাজে আসবে না। নবিজি (সা.) ইরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠার পূর্বে (কিয়ামতের আলামত) তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন’। (মুসলিম ৪৩, মুসনাদে আহমদ ২/৪৯৫)। অন্য হাদিসে এসেছে-‘আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন তার প্রাণ কণ্ঠনালিতে না আসা পর্যন্ত’। (তিরমিজি ৩৫৩৭, মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২)।

তবে তওবা কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে-প্রথমত গুনাহের কাজটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। একদিকে গুনাহে লিপ্ত থাকা, অন্যদিকে তওবা করার কোনো মূল্য নেই। দ্বিতীয়ত কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হওয়া। অপরাধ স্বীকার করে অনুতপ্ত এবং ছোট হওয়া। তৃতীয়ত এ কাজ ভবিষ্যতে কখনো না করার দৃঢ় সংকল্প করা। এগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিও না পাওয়া গেলে তওবা কবুল হবে না। উপরোক্ত শর্তগুলো আল্লাহর হকসংক্রান্ত গুনাহের জন্য। এর বিপরীতে গুনাহ কখনো বান্দার হকসংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে। যেমন-কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল বা চুরি করা। কারও ওপর জুলুম-অন্যায় বা অপবাদ দেওয়া। কারও গিবত করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রথমে তার হক যথাযথ বুঝিয়ে দিতে হবে কিংবা ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এরপর যথা নিয়মে তওবা করতে হবে। অন্যথায় তওবা কবুল হবে না। বান্দার কোনো হক আল্লাহতায়ালা কখনো ক্ষমা করেন না। সুতরাং, এ ব্যাপারে আমাদের খুবই সতর্কতা কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম