অন্যের দোষ তালাশ করা হারাম কাজ
হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মাঝে ভালো-মন্দ কিছু স্বভাব ও চাহিদাও দান করেছেন। সেগুলোকে আমরা মানবিক গুণ বলি। তাই মানুষ হিসাবে আমাদের প্রায় সবারই ভালো গুণাবলির সঙ্গে মন্দ কিংবা গোপন কিছু বিষয়ও থাকে কমবেশি-যা আমরা কারও কাছে প্রকাশ করতে চাই না; লুকিয়ে রাখতে চাই। এক কথায় যাকে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা বলে থাকি। এসব বিষয় প্রকাশ পেলে কখনো লজ্জার শেষ থাকে না। মারাত্মক কিছু হলে অনেক সময় গুরুতর কোনো সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে মানুষ। তাই মানুষের এসব দুর্বলতা ও গোপনীয়তা খুঁজে বের করা বা প্রকাশ করা গর্হিত কাজ।
ইসলাম মানুষের এসব প্রাইভেসিকে সম্মান করে, গুরুত্ব দেয়। কারও গোপন কোনো বিষয় খুঁজে বের করতে নিষেধ করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না’। (সূরা হুজুরাতু ১২)। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যে জিনিস নিষেধ করেছেন, তাকে ভয় করা এবং তা থেকে দূরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে দীর্ঘ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাতে নবিজি (সা.) কিছু মন্দ বিষয় থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘সাবধান, তোমরা সন্দেহ থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই সন্দেহ সবচেয়ে বড় গুনাহ। তোমরা মানুষের দোষ তালাশ করো না এবং গোয়েন্দাগিরি করো না। তোমরা বিবাদ, হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাক। তোমরা কারও পেছনে লেগ না এবং পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও!’ এ হাদিসের শেষে তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্মান ও সম্পদ হারাম’। (মুসলিম–২৫৬৩)।
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় মানুষের প্রাইভেসির সঙ্গে তার সম্মান জড়িত। কারও সম্মানে আঘাত করা বা কাউকে অপমানিত করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। স্পষ্ট হারাম এটা। তাই কারও কোনো গোপন বিষয় জেনে গেলেও তা অন্যের কাছে প্রকাশ করব না। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন করল, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন’। (সহিহ মুসলিম)।
হজরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যদি তুমি মুসলমানদের দোষ তালাশের পেছনে পড়, তাহলে তাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়বে। অথবা ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হবে।’ (আবু দাউদ ৪৮৮৮)। সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এ নিষেধাজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর একটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, একবার তার কাছে এক লোককে ধরে এনে বলা হলো, এ ব্যক্তির দাড়ি থেকে মদ ঝরে পড়ছে (অর্থাৎ, সে মদ খেয়েছে)। তখন তিনি বলে উঠলেন, আমাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি আমাদের সামনে কিছু প্রকাশ পায়, তা আমরা আমলে নেব। (আবু দাউদ-৪৮৯০)।
এখানে স্পষ্ট আলামত ছিল, যার সূত্র ধরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ওই ব্যক্তির মদপানের বিষয়টা প্রমাণ করতে পারতেন। কিন্তু শরিয়তের নিষেধাজ্ঞার কারণে অহেতুক তার পেছনে পড়েননি। এখানে আমাদের জন্য অনুপম আদর্শ ও শিক্ষা রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তি ও মানুষের পেছনে পড়াসহ সব ধরনের নিন্দনীয় কাজ থেকে হেফাজত করুন! উত্তম ও পরিশীলিত জীবন গঠনের তাওফিক দিন!