Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ঐতিহ্যে ইসলাম

বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ

Icon

মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা থেকে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ। মসজিদটিতে মোগল ও সুলতানি আমলের ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। বগুড়া বাংলার উত্তর দিকে অবস্থিত হওয়ায় এর গুরুত্ব শের শাহ অনুধাবন করতে পারেন। এটিকে তিনি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, শহরটি তিনি তার নামানুসারে করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি তার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। সম্রাট আকবর যখন বাংলায় তার ক্ষমতা সুসংহত করতে শুরু করেন, তখন বাংলার বারো ভূঁইয়ারা এবং মোগল বিদ্রোহীরা শেরপুরকে তাদের আশ্রয়স্থল হিসাবে খুঁজে পায়। এ সময় তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের উদ্দেশ্যে খেরুয়া মসজিদ গড়ে ওঠে। মসজিদের ওপরে কুলুঙ্গতে খোদাইকৃত শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮২ সালের ২০ জানুয়ারি জওহর আলী খান কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। খেরুয়া মসজিদের নামকরণ স্পষ্ট নয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তার ‘বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ’ বইতে উল্লেখ করেছেন ‘এ মসজিদের খেরুয়া নামে কোনো ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়নি। আরবি বা ফার্সি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।’ তবে ফার্সিতে ‘খায়ের গাহ্’ বলে শব্দ আছে। যার অর্থ ‘কোনো স্থানের ভেতরে’। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার, তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এ দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবেই ‘খায়ের গাহ্’ থেকে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। মসজিদের দৈর্ঘ্যরে পরিমাণ ১৭.৬৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৬২ মিটার; দেওয়ালের পুরুত্ব ১.৯৫ মিটার। মসজিদটির পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারটি অন্য প্রবেশদ্বারের তুলনায় বড় ও প্রশস্ত। প্রতিটি প্রবেশপথ একেবারে সুস্পষ্ট। মসজিদের অভ্যন্তরে পূর্ব দেওয়ালের প্রবেশদ্বারের সঙ্গে মিল রেখে তিনটি মিহরাব রয়েছে। খেরুয়া মসজিদ বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদ। প্রায় ৪৪১ বছর ধরে টিকে আছে এ মসজিদ। মোগল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ। খেরুয়া মসজিদ একটি প্রাচীন স্থাপত্য। শুধু শেরপুর নয়, সারা দেশের মধ্যে অন্যতম নান্দনিক একটি মসজিদ। তাই কালের সাক্ষী হয়ে সবুজ-শ্যামল মনোরম পরিবেশের বুক চিরে লালচে আভায় আজও দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হলে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে দীর্ঘদিন টিকে থাকবে এ মসজিদ। প্রাচীন মোগল যুগের স্মৃতিঘেরা এ ঐতিহাসিক স্থাপত্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। প্রাচীন এ মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের। লেখক : প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম