কবুল ইবাদতের জন্য প্রয়োজন পরিশুদ্ধ নিয়ত
হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মানব জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য আমরা সবাই জানি, একমাত্র ইবাদতের জন্যই আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তবে সে ইবাদতের আছে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি। সে নিয়ম মেনেই আমাদের ইবাদত করতে হবে। নিজের মন মতো কিছু করলেই তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে উলটা গুনাহের আশঙ্কাও থাকে। যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো নিয়ত। অর্থাৎ বিশুদ্ধ নিয়তে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। অন্য কাউকে খুশি করা বা লোক দেখানো ইবাদত না করা। এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তাদেরকে শুধু একনিষ্ঠভাবে বিশুদ্ধ চিত্তে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’-[সূরা বায়্যিনাহ-৫]। অন্য এক আয়াতে তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘হে নবি! আপনি বলে দিন, তোমাদের অন্তরের বিষয় গোপন কর বা প্রকাশ কর আল্লাহ সবকিছু জানেন!’-[সূরা আলে ইমরান-২৯]। এ আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায় কার মনে কী আছে, কে কোন নিয়তে ইবাদত করছে, আল্লাহ সব জানেন। এবং সে অনুযায়ী তিনি তাদের প্রতিদান দেন। তাদের নিয়ত শুদ্ধ হলে সওয়াব দেন। জান্নাতে প্রবেশ করান। আর নিয়ত খারাপ হলে গুনাহ দেন। জাহান্নামে দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘যদি দুজন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হয় (এবং লড়াই করে একজন মারা যায়) তাহলে হন্তারক এবং নিহত উভয়েই জাহান্নামে যাবে। বর্ণনাকারী সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হন্তারকের বিষয়টা তো বুঝলাম, কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামে যাবে? নবিজি (সা.) ইরশাদ করেন, কারণ সেও তো তার হন্তারককে হত্যার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল!-[বুখারি-৩১, মুসলিম-১৫]।
এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি বাহ্যিক কোনো অপরাধ না করেও জাহান্নামে যাচ্ছে। এমনকি সে জুলুমের শিকার হয়ে নিহতও হয়েছে। তবুও তাকে জাহান্নামে যেতে হবে একমাত্র তার নিয়তের কারণে। এ থেকেই বোঝা যায় ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব কত বেশি। নিয়ত নিয়ে হাদিসে চমৎকার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। নিয়তের বিষয়টা এখানে সুন্দরভাবে বোঝা যায়। হজরত মা’ন ইবনে ইয়াজিদ (রা.)-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বাবা ইয়াজিদ (রা.)-একবার কিছু দিনার নিয়ে মসজিদে এক ব্যক্তির কাছে দিয়ে এলেন যাতে সে তা সদকা করে দেয়। তখন আমি গিয়ে তার থেকে (সদকা হিসাবে) তা নিয়ে বাসায় চলে এলাম। আমার বাবা দেখে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তো তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা করিনি। তখন আমি রাসূল (সা.)-কাছে বিষয়টির সমাধান করে দেওয়ার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, ইয়াজিদ! তুমি যা নিয়ত করেছ, তার সওয়াব পেয়ে গেছ। আর মা’ন! তুমি যে দিনার নিয়েছ, সেটা তোমারই থেকে যাবে’-[বুখারি ১৪২২, মুসনাদে আহমদ-৫/১৩৩]।
সুবহানাল্লাহ, ইসলাম কত সুন্দর ধর্ম। সামান্য নিয়তের কারণেও সওয়াব পাওয়া যায়।