Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

উম্মতের জন্য নবিজির কান্না ও দোয়া

Icon

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উম্মতের জন্য নবিজির কান্না ও দোয়া

দরদি নবি, মায়ার নবি হিসাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তুলনাহীন। উম্মতের প্রতি প্রিয় নবির ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। আর প্রিয়নবি (সা.) গুনাহগার উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। উম্মতের জন্য তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন যে, মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন সমবেত সাহাবিদের সামনে আল্লাহ পাকের একটি বাণী পাঠ করলেন, যাতে নিজ উম্মত সম্পর্কে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর এ বক্তব্য উল্লেখ আছে : ‘হে আমার পরওয়ারদিগার! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য মানুষকে বিপথগামী করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে কেবলমাত্র সে-ই আমার দলভুক্ত। আর কেউ আমার কথা অমান্য করলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৬)। তারপর নিজ উম্মত সম্পর্কে হজরত ঈসা (আ.)-এর এ বক্তব্য কুরআন থেকে পাঠ করলেন : ‘যদি তুমি তাদের শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও তবে তা-ও তোমার অসাধ্য নয়। কারণ, তুমি তো মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী। (সূরা মায়েদা : ১১৮)। এ দুটি আয়াত পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর দরবারে দুটি হাত উত্তোলন করে বললেন-‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত! এবং অনেক কান্নাকাটি করলেন।’ তখন মহান আল্লাহ জিবরাইলকে বললেন, হে জিবরাইল! মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। তাঁকে জিজ্ঞেস কর, সে কী কারণে কাঁদছে? অথচ আল্লাহপাকই সর্বাধিক জানেন, তিনি কেন কাঁদছেন। জিবরাইল (আ.) এসে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। নবি (সা.) তাকে সব কিছু জানালেন। অথচ আল্লাহ নিজেই সব কিছু জানেন। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে ফিরে যাও। গিয়ে তাঁকে বল, আমি অচিরেই তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করব। তোমার মনে ব্যথা দেব না।’ (সহিহ মুসলিম : ২০২)। উম্মতের প্রতি প্রিয়নবি (সা.)-এর ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। যে কারণে আল্লাহতায়ালা আয়াত নাজিল করেছেন এভাবে ‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসূল এসেছেন; (তোমাদের জন্য তাঁর মায়া এতই বেশি যে) তোমাদের যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)।

গুনাহের কাজের দিকে সাধারণত মানুষের ঝোঁক বেশি। কারণ গুনাহকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। এ আকর্ষণ থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ ও সফলতা নিহিত। অন্যথায় গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। প্রিয়নবি (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য নেক আমলের শিক্ষা দিতেন এবং গুনাহের কাজ বর্জনের নসিহত করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার ও মানুষের উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালিয়েছে। আগুন চারপাশ আলোকিত করলে কীট-পতঙ্গ এসে ভিড় জমাতে থাকে। পতঙ্গগুলো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ওই লোক তাদের সেখান থেকে তুলে ছুড়ে ফেলে। আবার তারা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন। আমি তোমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাধা দিই। আর মানুষ সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ (বুখারি : ৬৪৮৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য এতই ফলপ্রসূ চিন্তা করতেন যে, তাদের জন্য একটি দোয়া জমা রেখেছেন। যে দোয়া পরকালে করবেন। কারণ পরকালীন সফলতাই মানুষের আসল সফলতা, চিরস্থায়ী সফলতা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সব নবির এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবি দ্রুত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কেয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাআল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৯৯)।

উবাইদ বলল, মা, প্রবীণরা বলতেন, ‘দেরিতে সাক্ষাৎ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, তোমাদের দুর্বোধ্য কথাগুলো রাখ। ইবনে উমাইর বলল, আপনার দেখা রাসূল (সা.)-এর বিস্ময়কর কিছু আমাদের বলুন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি বলেন, এক রাতে রাসূল (সা.) বললেন, হে আয়েশা, আমাকে ছাড়। আমার রবের ইবাদত করব। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ, আপনার সান্নিধ্যে থাকতে ভালোবাসি। আপনাকে আনন্দিত দেখতে পছন্দ করি। তিনি উঠে ওজু করেন। অতঃপর নামাজ আদায় করেন। তখন কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কোল ভিজে যায়। তিনি তখন বসা। অশ্রুতে তাঁর দাড়ি ভিজে যায়। এরপর জমিনও ভিজে যায়। বিলাল (রা.) এসে তাঁকে নামাজের জন্য ডাকেন। রাসূলকে কাঁদতে দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন কাঁদছেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করেছেন। তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ রাতে আমার ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। কেউ তা পাঠের পরও চিন্তা না করলে তার জন্য ধ্বংস। আল্লাহ বলেন, আসমান-জমিন সৃষ্টি ও দিন-রাতের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন আছে।’ (সূরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)।

অন্যের কুরআন তেলাওয়াত শুনে রাসূল (সা.) কান্না করতেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) আমাকে বলেন, আমাকে কুরআন পড়ে শোনাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। আমি আপনাকে কুরআন পড়ে শোনাব। তিনি বললেন, আমি অন্যদের কাছ থেকে কুরআন শুনতে পছন্দ করি। আমি সূরা নিসা পাঠ করি। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমি সব উম্মতের একজন সাক্ষী আনব এবং আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে আনব তখন কেমন হবে?’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ৪১)। এ আয়াত পাঠের পর আমি মাথা তুলে দেখি, তাঁর দুচোখ অশ্রুসিক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৫৫)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম