ঐতিহ্যে ইসলাম
বিবিচিনি শাহী মসজিদ
মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঐতিহাসিক বিবিচিনি মসজিদটি একটি মোগল স্থাপত্য। মসজিদটির অবস্থান বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এ মসজিদ অবস্থিত।
মসজিদটির নামেই ইউনিয়নটিকে বিবিচিনি ইউনিয়ন হিসাবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণবঙ্গে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসাবে অভিহিত করা হয় এ মসজিদকে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোগল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আধ্যাত্মিক সাধক শাহ নেয়ামত উল্লাহ প্রাচীন পারস্য (বর্তমান ইরান) থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লিতে আগমন করেন।
সে সময় সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র ও বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সূজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইসলাম প্রচারের জন্য শাহ নেয়ামত উল্লাহ শিষ্যসমেত বজরায় চড়ে গঙ্গা অববাহিকা অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে (বর্তমান চন্দ্রদ্বীপ) নোঙর করেন। দিল্লিতে আসার তিন-চার বছরের মাথায় শাহ সুজার আগ্রহে কয়েকজন শিষ্য সঙ্গে নিয়ে নেয়ামত উল্লাহ আসেন বেতাগীর এ গ্রামে। তখন এ গ্রামের নাম বিবিচিনি ছিল না।
তখন সুবাদার শাহ সুজার অনুরোধে এ গ্রামেই তিনি এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে সাধক নেয়ামত উল্লাহ শাহের কন্যা চিনিবিবি ও ইছাবিবির নামের সঙ্গে মিলিয়ে ওই গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি এবং মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে বিবিচিনি শাহী মসজিদ। শাহ নেয়ামতুল্লাহর নামের সঙ্গে মিল রেখেই বিবিচিনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামের নামকরণও করা হয় নেয়ামতি। এক সময় অঞ্চলটি ছিল মগ-ফিরিঙ্গিদের আবাসস্থল। তাদের হামলার প্রতিরোধে মসজিদটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৭০০ সালে হজরত শাহ নিয়ামত উল্লাহর মৃত্যুর পর তাকে এ মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়।
মসজিদ এলাকায় পা রাখতেই দূর থেকে ছোট্ট টিলার ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির একমাত্র গম্বুজটিতে যে কারো চোখ আটকে যাবে। এ স্থাপত্যের আয়তন খুব বিশাল না হলেও স্থাপত্য রীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট প্রতীয়মান। দিগন্তজোড়া সবুজের মাঝখানে প্রায় ৪০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিবিচিনি শাহী মসজিদের ভবনটির উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। বর্গাকার এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। চারপাশের দেওয়ালগুলো ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। দক্ষিণ ও উত্তরদিকে মোট তিনটি করে দরজা আছে।
১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব নেয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করে। এ সংস্কার কাঠামোয় মসজিদের পুরোনো কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে হুবহু মিল রেখে কাজ করা হয়। মসজিদের ভেতরে অবাধে বায়ু চলাচলের পথগুলো উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের সংস্কারমূলক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।