Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ধর্ম শান্তির সুবাতাস ছড়ায়

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ম শান্তির সুবাতাস ছড়ায়

ফাইল ছবি

প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষা শান্তি। সব ধর্মই শান্তির কথা বলে, শান্তির শিক্ষা দেয়। তারপরও সমাজে অশান্তি আর নৈরাজ্য সৃষ্টি করতেই যেন মানুষ তৎপর। আমরা লক্ষ করি, সমাজ বা দেশে একটি শ্রেণি এমন থাকে যারা বিশৃঙ্খলা করে যেন সুখ পায়। এ গুটিকতক মানুষের কারণে সাধারণ নিরীহ মানুষকে পড়তে হয় বিপাকে। অথচ ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মই, আমাদের সব ধরনের মন্দ কাজ পরিহার করে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে চলার শিক্ষা দেয়। ইসলামের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মান্য করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা।

আল্লাহতায়ালার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহিত রয়েছে ‘ইসলাম’ শব্দটিতে। তাই ইসলাম বলতে বোঝায় আনুগত্য, বাধ্যতা ও আত্মসমর্পণ। কুরআনের ভাষায় ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ। ইসলাম এবং সন্ত্রাস এ দুটির ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয় আর সন্ত্রাস দেয় নৈরাজ্যের শিক্ষা। বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহপাক ইসলাম নামক ধর্মকে মনোনীত করেছেন। ইসলামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। ইসলামের শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা এত অতুলনীয় যে, অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেন ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ কর না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সূরা আন আম, আয়াত : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা-পূজারিদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি বরং সব জাতি এবং সব সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন পাঠে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহতায়ালা যখন আদম সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহতায়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছ যে, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আর রক্তপাত ঘটাবে? এর উত্তরে সর্বজ্ঞানী খোদা কেবল এটাই বলেছিলেন, ‘ইন্নি আ’লামু মালা তা’লামুন’ অর্থাৎ আমি তা জানি, যা তোমরা জান না’ (সূরা আল বাকারা : ৩০)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহান আল্লাহ কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রক্তপাতের কথা অস্বীকার করেননি। সে কথার উল্লেখ না করে তার উত্তরে তিনি কেবল তার মহাজ্ঞানের আমরা আর এ বিষয়ে ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিলেন। ধর্ম জগতের ইতিহাসে এক ঝলক ভাসাভাসা দৃষ্টি দিলে বাহ্যত ফেরেশতাদের কথাই ঠিক বলে মনে হবে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, যেখানেই ধর্ম সেখানেই অশান্তি, যেখানেই ধর্ম সেখানেই বিগ্রহ ও নৈরাজ্য। কিন্তু না, একটু মনোযোগ দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। দেখতে পাবেন, এ বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য ধার্মিকদের কাছ থেকে নয় আর আল্লাহর কাছ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকেও নয়। কিন্তু যারা সমাগত সত্য, সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারি হয়ে থাকতে চেয়েছে, যারা তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও গলিত-মথিত সমাজ দর্শন পরিত্যাগ করতে চায়নি-এসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের কাছ থেকে পরিচালিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ঐশী বাণীটি ভালোভাবে পড়লেই বিভিন্ন স্থানে হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এ একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ করব।

বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারা জীবন মার খেয়েছেন, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তার কাছ থেকে পরিচালিত সব আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সূরা হজের দুটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে। আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হলো কেননা, তারা অত্যাচারিত। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্যকল্পে পূর্ণ ক্ষমতাবান।

যাদের তাদের নিজ বাড়িঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেওয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আল্লাহর কাছ থেকে যদি মানুষের একদলকে মানুষের আরেকদল দিয়ে প্রতিহত না করা হতো তাহলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মঠ, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় (ধ্বংস করে দেওয়া হতো) যেখানে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী’ (সূরা আল হজ, আয়াত : ৩৯ ও ৪০)।

মদিনায় অবতীর্ণ উল্লিখিত আয়াত দুটিতে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে মহানবি (সা.) অনুসারীরা দীর্ঘকাল মক্কার অত্যাচারিত নিপীড়িত থাকার পর যখন তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মক্কায় কাফেররা যুদ্ধ চাপিয়ে দিল কেবল তখনই আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত একথা বলা হয়েছে, কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে এ যুদ্ধ পরিচালিত হবে না বরং মঠ, গির্জা, মন্দির ও মসজিদ তথা সব ধর্মের উপাসনালয় রক্ষার্থে আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সব ধর্মীয় ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা-এর চেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আর কী হতে পারে! যারা সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৈতিকতাবর্জিত কর্মকাণ্ড চালায়, তারা কখনো শান্তিকামী মানুষ হতে পারে না। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে।

এ স্বাধীনতা কেবল ধর্মবিশ্বাস লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এ ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব, যার ইচ্ছা সে ইমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’ (সূরা কাহাফ, আয়াত : ২৮)। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত অর্থে ধর্মের শিক্ষা বোঝার এবং ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় নিজেদের জীবন পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

masumon83@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম