Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা ইমানি দায়িত্ব

Icon

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা ইমানি দায়িত্ব

প্রতীকী ছবি

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের ইমানি দায়িত্ব। যেহেতু এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, তাই এটা দেশের আপামর জনগণের হক। এ সম্পদ দেশের মানুষের কাছে আমানত। কোনোভাবেই তা নষ্ট ও অপচয় করার সুযোগ নেই। যে বা যারা এটা নষ্ট ও অপচয় করবে, এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত থাকবে যা প্রত্যেকেই পাপের ভাগিদার হবে। পবিত্র কুরআনে বারবার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে আমানত রক্ষার জন্য। সরকারি সম্পদ জনগণ ও দায়িত্বশীলদের কাছে আমানত। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।’-সূরা আল বাকারা : ১৮৮।

প্রকৃত ইমানদার হওয়ার অন্যতম আলামত হলো আমানত রক্ষা করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।-সূরা আল মুমিনুন : ৮। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতকে তার মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ করো বা ফেরত দাও।’-সূরা আন-নিসা : ৫৮।

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত এক হাদিসে উল্লেখ আছে, কেয়ামত দিবসে তিন ধরনের মামলা উঠবে এক. ক্ষমার অযোগ্য মামলা। সেটি হলো শিরক করে তওবা ছাড়া মারা যাওয়া, দুই. আল্লাহর হকসংশ্লিষ্ট বিধান না মানা। সেগুলো আল্লাহ চাইলে মাফ করতে পারেন, চাইলে সাজাও দিতে পারেন। তিন. বান্দার হক নষ্ট করা। কারও হক নষ্ট করা, কাউকে গালি দেওয়া, কারও জমি আত্মসাৎ করা। এসব মামলার বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘এই মামলা আমার কাছে নয়। ওই বান্দা যদি তোমাকে ছাড় দেয় তো দিল, আর না দিলে আমি আল্লাহর কিছু করার নেই।’

এমতাবস্থায় রাষ্ট্রের কোনো সম্পদ নষ্ট করলে-পুরো দেশের মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে। আর তারা ক্ষমা না করলে কিয়ামতের যে মুহূর্তে সবাই একটা নেকির জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকবে, তখন আমাকে আমার নেকির বিনিময়ের মাধ্যমে এই ঋণ পরিশোধ করে নিতে হবে। এ বিষয়ে একটি হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-তোমরা কি জান (প্রকৃত) গরিব কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সেই গরিব। তিনি (সা.) বললেন, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি গরিব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে নামাজ, রোজা ও জাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেসব লোকেদেরও নিয়ে আসবে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গোনাহ তার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর প্রতিটি নাগরিকের এ আমানত রক্ষা করা উচিত। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, তোমাদের আমানতগুলো প্রাপকের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৫৮)।

পেয়ারা নবি মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘লা ঈমানা, লিমান লা আমানাতা লা’। অর্থাৎ-‘যার আমানতদারি নেই, তার ইমান নেই’। (মুসনাদে আহমদ)। রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে প্রিয় নবি (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহিহ বুখারি)। রাষ্ট্রীয় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পাহাড়, মাটি, বন, বালি, আরও যে কোনো সম্পদ যথাযথ ব্যবহার না করলে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় হবে। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’। (বনি ইসরাইল : আয়াত ২৭)।

আমাদের দেশে রয়েছে অনেক সরকারি খাস জমিন, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে অবৈধ স্থাপনা, পাহাড় কাটা, বন উজাড় করা, নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের শামিল। নবি মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে, এক বিঘা জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন ৭ স্তবক জমিন, তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (আল হাদিস)।

সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গোনাহ। এর ফলে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যারা আত্মসাৎ করে, তারা কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত সম্পদসহ উপস্থিত হবে। আর প্রত্যেকে তার উপার্জনের ফল ভোগ করবে’। (আল কুরআন)। সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজায় এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে, রাসূলে কারিম (সা.) তার জানাজা পড়াননি। বরং বললেন, সে সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাশি করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেয়েছিলাম। সহিহ মুসলিম ও বুখারি শরিফে বর্ণিত, একবার রাসূল (সা.) ইবনুল লুতবিয়াকে বায়তুল মালের অর্থ আদায়ের জন্য নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে এসে আদায়কৃত অর্থগুলো দুভাগে ভাগ করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, আর এগুলো আমার সম্পদ। যা মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার কথা শুনে রাসূল (সা.) খুব রেগে গেলেন। তিনি সাহাবাদের বললেন, তোমাদের কাউকে আমি সদকা আদায়ের জন্য পাঠালে, সে ফিরে এসে বলে, এগুলো রাষ্ট্রের আর এগুলো আমার সম্পদ, যা মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার চিন্তা করা উচিত, যদি সে বাড়িতে বসে থাকত, তাহলে মানুষ তখন তাকে হাদিয়া দিত না।

রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহর কসম! যারা রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করবে না, আমানতের খেয়ানত করবে, কিয়ামতের দিন তারা উট কাঁধে নিয়ে উঠবে। সে চিৎকার করে আমার কাছে সাহায্য চাইবে, কিন্তু সে দিন আমি তার কোনো সাহায্য করব না। আলোচ্য কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা মুমিনের ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটি একটি বিশাল আমানত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম