রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীর ঠিকানা জাহান্নাম
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যেসব সম্পদে সবার অধিকার রয়েছে, এমন সম্পদকে পবিত্র আমানত হিসাবে ঘোষণা করেছে ইসলাম। এ আমানত রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব।
পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমাদের প্রাপ্য আমানতগুলো প্রাপকের কাছে ফিরিয়ে দাও।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৫৮)।
মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার আমানত নেই, তার ইমান নেই।’ (মুসনাদে আহমদ)। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর এ মর্মবাণী অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ)।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ। এর ফলে কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারীকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সাহাবি হজরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে রাসূলে কারিম (সা.) নিজে তার জানাজা পড়াননি। বরং বললেন, তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাশি করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেলাম, যার মূল্য হয়তো দুই দিরহাম হবে।’ (মুয়াত্তা, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা)।
আজকে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করছেন, এ সম্পদই কিয়ামতের দিন তাদের জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবে। একবার রাসূল (সা.) ইবনুল লুতবিয়া নামক এক সাহাবিকে বায়তুল মালের অর্থ আদায়ের জন্য নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে এসে আদায়কৃত অর্থগুলো দুই ভাগে ভাগ করে রেখে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এগুলো বায়তুল মালের আর এগুলো আমার। মানুষ এগুলো আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার কথা শুনে রাসূল (সা.) খুব রেগে গেলেন। তিনি সাহাবায়ে কিরামকে ডেকে দীর্ঘ এক ভাষণ দিলেন।
তিনি বললেন, তোমাদের কাউকে আমি সদকা আদায়ের জন্য পাঠালে, সে ফিরে এসে বলে, এগুলো বায়তুল মালের আর এগুলো মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। সে কি চিন্তা করে দেখেছে, যদি সে বাড়ি বসে থাকত তাহলে মানুষ তাকে হাদিয়া দিত? আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ কিয়ামতের দিন উট কাঁধে করে উঠবে। সে উট চিৎকার করে ডাকতে থাকবে। সে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসবে, কিন্তু সে দিন আমি তার কোনো সাহায্যই করতে পারব না। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। আলোচ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আত্মসাৎকারী কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত বস্তু কাঁধে নিয়ে উঠবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার পাপ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!