সহজে তাহাজ্জুদের অভ্যাস হবে যেভাবে
সুহাইল আহমদ
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গভীর রাতে চারপাশ যখন আঁধারে ছেয়ে যায়, গোটা পৃথিবী যখন নীরব ঘুমে আচ্ছন্ন হয়, দুনিয়ার মানুষ তাদের ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়, তখন আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য রহমতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ওই সময়কে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের বিশেষ সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান প্রভুর সঙ্গে প্রেমের আলাপনে মশগুল হন। প্রিয়নবি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম রাতের শেষাংশ নামাজে কাটাতেন। ইসলামের পরিভাষায় এ নামাজকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়।
যেসব পুণ্যবান বান্দা গভীর রজনিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান স্রষ্টার আনুগত্যে মশগুল হয়, মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে তাদের প্রশংসা করে বলেন, যে ব্যক্তি গভীর রজনিতে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদতে মশগুল হয়, পরকালের আশঙ্কা রাখে এবং তার পালনকর্তার অনুগ্রহ কামনা করে, সে কি তার সমান যে, এরূপ করে না? আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। (সূরা যুমার, আয়াত-৯)।
তাহাজ্জুদের নামাজ সবচেয়ে বড় নফল ইবাদত। মাত্র দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মর্যাদা পাওয়া যায়। রাসূলু (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে তার স্ত্রীকে জাগাবে এবং দুজনে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহর দরবারে তারা শ্রেষ্ঠ জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’
হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা অবশ্যই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়। এটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের তরিকা। এর দ্বারা স্বীয় রবের নৈকট্য লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। (মুসতাদরাকে হাকেম)। হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতে এরূপ বালাখানা আছে, যার ভেতরের অংশ বাইর থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়। আল্লাহতায়ালা এ বালাখানাকে ওইসব লোকের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা লোকদের খানা খাওয়ায়, বেশি পরিমাণে সালাম দেয় এবং এমন গভীর রজনিতে নামাজ পড়ে, যখন লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। (ইবনে হিব্বান)। যে ইবাদতকে শয়তান সবচেয়ে ঘৃণা করে, তা হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। শয়তানের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে যায়, শয়তান তখন তার মাথার কাছে এসে বসে তিনটি গিঁট বাঁধে। প্রতিটি গিঁট বাঁধার সময় একটি কথা বলে, তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও। যখন বান্দা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তখন একটি গিঁট খুলে যায়। সবশেষে যখন সে নামাজ পড়ে, তখন শেষ গিঁটটি খুলে যায়।’
তাহাজ্জুদের সময় ঘুম থেকে উঠার জন্য কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমত ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া উত্তম। এর সবচেয়ে চমৎকার তাৎপর্য হলো, কোনো কারণে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠতে না পারলে সওয়াব পাওয়া যাবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার বিছানায় এলো এবং যার নিয়ত ছিল রাতে উঠে নামাজ আদায় করা, কিন্তু তার ঘুম প্রবল হলো; তার নিয়ত অনুযায়ী তার জন্য পুরস্কার লেখা হবে এবং তার ঘুম আল্লাহর জন্য সদকাস্বরূপ।’ দ্বিতীয়ত অহেতুক কাজ থেকে বিরত থেকে ঠিক সময় দ্রুত ঘুমাতে হবে। দ্রুত ঘুমালে কিয়ামুল লাইল ও ফজরের শক্তি সঞ্চয় হয়। তৃতীয়ত তাহাজ্জুদের নামাজকে সহজভাবে নিতে হবে। ফজরের নামাজের ২৫-৩০ মিনিট আগে উঠে এ অভ্যাস রপ্ত করা যায়। এরপর আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়।
হজরত আয়েশা (রা.)-এর বরাতে পাওয়া একটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেই পরিমাণ আমল করো, যার সাধ্য তোমাদের রয়েছে।’
চতুর্থত ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুমের আদবগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন ওজুসহ ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমের দোয়া পাঠ করা।