Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সুখী সমৃদ্ধ জীবনের জন্য ইসলাম

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুখী সমৃদ্ধ জীবনের জন্য ইসলাম

ইসলাম হচ্ছে হীরক সদৃশ স্বচ্ছ সুন্দর এক শান্তি। যে কোনো আঙ্গিক থেকেই এটাকে দেখা হোক না কেন, এটা হচ্ছে অবিমিশ্র শান্তি, খাঁটি শান্তি এবং শান্তি ভিন্ন আর কিছুই নয়। ধর্মের সার্বিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামের যথার্থ নামটিই হচ্ছে অনুপম, ধর্মটির এমন একটি নাম দেওয়া হয়েছে, আক্ষরিকভাবেই যার অর্থ হচ্ছে ‘শান্তি’।

এর আরেকটি অর্থও রয়েছে, যা হচ্ছে, খোদার ইচ্ছা ও আদেশের ওপর পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। যে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থেই ইসলামে বিশ্বাস করে, তাকে মুসলমান বলে। খাঁটি মুসলমানের একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দান করেছেন মহানবি হজরত মোহাম্মাদ (সা.)।

তিনি (সা.) বলেন, ‘একজন মুসলমান হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার হাত এবং যার জিহ্বা থেকে সব মানুষই সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ’ (সুনান নিসাই, ৮ম খণ্ড)। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের দিনে ইসলাম ‘সন্ত্রাস ও রক্তপাতের ধর্ম’ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে এবং এক বৃহৎসংখ্যক জনগোষ্ঠী এটাকে প্রকৃতপক্ষে এমন এক ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করে, যে ধর্ম মানুষে মানুষে এবং জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণার বিস্তার ঘটায়।

প্রকৃত ঘটনা হলো, ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং পবিত্র নবি হজরত মোহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তির বাণী বিস্তারকারী। ইসলাম যে প্রকৃতপক্ষেই শান্তির বার্তাবাহক, ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংস্রতা অথবা রক্তপাতের বার্তা হওয়ার চেয়ে বহু যোজন দূরে, তা বুঝতে পবিত্র কুরআন আমাদের সাহায্য করবে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন প্রথম এ জোরালো বিবৃতি দান করে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)।

এ আয়াত স্পষ্টভাবে এ ঘোষণা দেয়, বিশ্বের সব মানুষই তাদের নিজ ধর্ম পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সে ধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যে কোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে।

পবিত্র কুরআনই এ ঘোষণা দেয়, বিশ্বাসের স্বাধীনতা হচ্ছে সব মানুষের মৌলিক অধিকার। পছন্দমাফিক যে কোনো ধর্মেই তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং তাদের পছন্দ মোতাবেক তারা যে কোনো ধর্মেরই আজ্ঞাবাহী সদস্য হতে পারে।

পবিত্র কুরআন এ ঘোষণা করে, ‘এবং বল, এটা হচ্ছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে আগত সত্য, সে কারণে যে চায়, এতে বিশ্বাস করুক এবং যে চায়, অবিশ্বাস করুক’ (সূরা কাহফ, আয়াত : ২৯)। এ আয়াত থেকে এ শিক্ষাই পাওয়া যায়, যারা এতে বিশ্বাস করতে পছন্দ করে, তাদের তা করতে দাও এবং যারা এতে বিশ্বাস করতে চায় না, তাদের সেটা অগ্রাহ্য করতে দাও। ধর্মের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটাকে পছন্দ করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীনতা দান করা হয়েছে।

ইসলামের এমন কোনো অস্ত্র নেই, যা দিয়ে কোনো মানুষকে জবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করা যায়। অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা নিয়ে অন্য আরেকটি প্রশ্ন অনেকের মনে পীড়া দেয়। ইসলাম কি মুসলমানদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা করতে নাকি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করতে শিক্ষা দেয়?

এ বিষয়ের ওপর পবিত্র কুরআন প্রচুর পথনির্দেশনা দান করে। পবিত্র কুরআন বর্ণনা করে, ‘বল, হে আহলে কিতাব! আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে সমশিক্ষাপূর্ণ একটি নির্দেশের দিকে এসো-যা হচ্ছে, আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমরা তার সঙ্গে আর কাউকেই শরিক করি না এবং তাকে ছাড়া আমরা আর কাউকেই প্রভু-প্রতিপালক বলে মান্য করি না’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬৪)।

একই বিষয়ে পবিত্র কুরআন আরও বর্ণনা করে, ‘এবং ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতায় পরস্পরকে সাহায্য কর, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরকে সাহায্য করো না’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ২)। ধর্মের কোনো উল্লেখ এখানে করা হয়নি। পবিত্র কুরআন বলে, তোমাদের উচিত, সর্বদাই প্রত্যেক সৎকর্ম ও মহৎ উদ্দেশ্যের আহ্বানে যোগদান করা, সে আহ্বান যদি কোনো ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা যে কোনো ধর্মের অনুসারী, এমনকি নাস্তিকের তরফ থেকেও আসে, ইসলাম মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করারও আবশ্যকতা বোধ করে। তাদের উচিত কেবল সেই কারণটির প্রতিই তাকানো, যেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, কে আহ্বান করছে, সেদিকে নয়।

ইসলাম সোনালি এক নীতিনির্ধারণ করেছে, যা সব মানুষই অনুসরণ করতে সক্ষম এবং তা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে। ইসলাম এ শিক্ষা দান করে, সব আচরণের ভিত্তি সর্বদাই ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। পবিত্র কুরআন বর্ণনা করে, ‘হে যারা ইমান এনেছ, আল্লাহর ব্যাপারে স্থির সংকল্প হও, সাক্ষ্যদানে নিরপেক্ষতা বজায় রাখো এবং মানুষের শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচারহীন কোনো কাজে প্ররোচিত না করে। সর্বদাই ন্যায়পরায়ণ হও, সেটাই হচ্ছে সততার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবশ্যই অবগত আছেন’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৮)।

একথা এটাকে পর্যাপ্তভাবে খোলাসা করেছে, ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের ওপর এটি নির্ধারিত করা হয়েছে, শত্রুদের সঙ্গেও তারা ন্যায্যতার নিরিখে আচরণ করবে। এমন একটি ধর্ম, যা ঐক্য ও সহযোগিতার অনুপম শিক্ষার বিস্তার ঘটায়, সে ধর্মের এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি যে, অন্য লোকদের বিরুদ্ধে কখনো সহিংসতা অথবা ঘৃণার বিস্তার ঘটাবে? দুর্ভাগ্যক্রমে কতিপয় লোক আজকাল ইসলামের নামে অনেক ধরনের সন্ত্রাসমূলক কাজ করে থাকে। সংখ্যায় তারা সামান্য কজনই, যারা তাদের নিজ ধর্মের সঙ্গে প্রতারণা করে।

ইসলামের নামে যারা অন্যলোকদের বিরুদ্ধে এসব নৃশংসতা ঘটায় এবং সন্ত্রাসী কর্ম করে, তাদের কখনোই ইসলামের সুন্দর নামটি ছিনিয়ে নিতে দেওয়া অথবা ইসলামের দূত এবং প্রতিনিধি হতে দেওয়া যায় না। তারা হচ্ছে তাদের নিজ ধর্মের অমান্যকারী এবং সেজন্য তারা কঠোরভাবে নিন্দার যোগ্য এবং আগ্রাসী কর্ম ও ইসলামের সুন্দর নামকে কলঙ্কিত করার জন্য কঠোর শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

ইসলামের অনুপম শিক্ষা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে, যার দু-একটি উদাহরণ এখানে উপস্থাপন করেছি মাত্র, আর এ থেকে এটি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে, সমাজ বা দেশে নৈরাজ্য বিস্তার করার শিক্ষা ইসলাম কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায় না। একজন খাঁটি মুসলমান সে কখনোই সন্ত্রাসী হতে পারে না। আল্লাহপাক সবাইকে প্রকৃত ইসলাম শিক্ষার ওপর আমল করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

masumon83@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম