আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান মাহে রমজান
মাহমুদ আহমদ
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)।
পবিত্র কুরআনের ওই আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়, তা হলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সব ধর্মেই ছিল, আছে এবং দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণির কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এ ধরনের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন।
পবিত্র মাহে রমজানের এ রোজাকে অর্থাৎ উপবাস পালনকে ইসলাম পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গ মনে করে থাকে। যিনি রোজা পালন করেন, তিনি যে কেবল শরীর রক্ষাকারী খাদ্য পানীয় থেকেই বিরত থাকেন তা নয় বরং তিনি সন্তানাদি জন্মদান তথা বংশবৃদ্ধির ক্রিয়াকলাপ থেকেও দূরে থাকেন এবং সব পাপ কাজ থেকেও বিরত থাকেন। তাই যিনি রোজা রাখেন, তিনি তার অসাধরাণ আত্মত্যাগের এবং তার প্রস্তুতির কথা আল্লাহপাককে জানিয়ে দেন আর তার হৃদয় এ ঘোষণাও দেয়, আমি কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখছি।
এছাড়া তার হৃদয় এটাও বলে, যেহেতু আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি এবং সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করছি, তাই প্রয়োজন বোধে আমি আমার প্রভু ও সৃষ্টিকর্তার খাতিরে আমার সবকিছু, এমনকি আমার জীবন পর্যন্ত কুরবানি করে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হব না।
পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত-বন্দেগির বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। ইসলামে রোজার মাহাত্ম্য অতি ব্যাপক। এ মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে বোঝাতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা’ (জামেউস সগির)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।
যদিও আমরা সবাই জানি, পবিত্র রমজান বড়ই কল্যাণমণ্ডিত মাস, দোয়ার মাস। তারপরও আমরা অনেকেই এ মাসের ইবাদত-বন্দেগি থেকে গাফেল থাকি। অন্যান্য মাসের মতোই এ পবিত্র মাসটিকে হেলায় কাটিয়ে দেই। আমরা যারা পবিত্র এ মাসটি লাভ করার তৌফিক পেয়েছি, নিশ্চয় তারা সৌভাগ্যবান। অনেকেই হয়তো আশায় ছিল, কিন্তু লাভ করতে পারেননি, না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাই আমাদের এ মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণমণ্ডিত হওয়া। আমরা যদি হজরত রাসূল করিম (সা.)-এর জীবনে রমজানের দিনগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাই, তিনি (সা.) রমজানে কত বেশি নফল ইবাদত আর দান খয়রাত করতেন।
অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে মহানবি (সা.)-এর ইবাদত আর দান খয়রাতে আরও বেশি গতি লাভ করত আর পবিত্র মাহে রমজানের রাতগুলো মহানবি (সা.) অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতেন। মহানবি (সা.)-এর নফল নামাজ আর দোয়ার আহাজারিতে জেগে থাকত নিঝুম রাতগুলো। এছাড়া এ মাসে তিনি (সা.) কুরআন শিক্ষা, শেখানো ও শোনার প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন। আমাদের সবার উচিত হবে, রমজানের কল্যাণরাজি দ্বারা নিজেদের সুশোভিত করা; যেন এ রমজানে কুরআন তেলাওয়াতের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে আমাদের চারপাশ। যেন কুরআনের আলোয় আলোকিত হয় সমগ্র বিশ্ব।
এছাড়া তারাবি, তাহাজ্জুদ প্রভৃতি নফল নামাজ আর দোয়ার মাধ্যমে জাগিয়ে রাখি আমাদের রাতগুলো আর দিনগুলোও; যেন কাটাই আল্লাহর স্মরণে। আল্লাহর সঙ্গে যেন আমাদের বিশেষ এক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায় আমাদের জীবনে লাভ হয়, সেই সৌভাগ্যমণ্ডিত রজনির। তাই আল্লাহকে লাভ করতে হলে রমজানের রাতগুলো ইবাদতে জাগ্রত রাখতে হবে আর দিনগুলোকেও সাজাতে হবে পবিত্র সব কর্ম দ্বারা।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com