Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

তাহাজ্জুদ নামাজের শ্রেষ্ঠ সুযোগ রমজান মাসে

Icon

মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তাহাজ্জুদ নামাজের শ্রেষ্ঠ সুযোগ রমজান মাসে

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার আগে নবিজি (সা.)-এর ওপর এ সালাত ফরজ ছিল। তিনি আবশ্যিকভাবে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হলে এর আবশ্যকীয়তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীকালে নবিজি (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত এ সালাত আদায় করেছিলেন নিয়মিতভাবে। তারই ধারাবাহিকতায় এখনো সুন্নাতে রাসূল হিসাবে এর বিধান বহাল আছে।

সালাতুত তাহাজ্জুদ অত্যন্ত বরকত ও ফজিলতপূর্ণ সালাত। বিশেষত রমজানে তাহাজ্জুদ আদায়ের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে রাসূল! আপনি রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়ুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ নবিজি (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার বিধান নাজিল করেন।

সাহরির সময়ে অর্থাৎ শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। রাসূল (সা.) ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক ও অজু করে সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তিনি সালাতুত তাহাজ্জুদে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন। হজরত মুগীরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি (সা.) সালাতুত তাহাজ্জুদে এত দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়ালেন, তাঁর পাদ্বয় ফুলে গেল। যখন তাকে বলা হলো আপনি এরূপ কেন করেন? আল্লাহতায়ালা তো আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। উত্তরে তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা : ১০৮-৯, হাদিস নং-১১৪৯)।

নবিজি (সা.) সালাতুত তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতেন। কোনো কারণে তিনি এ সালাত আদায় করতে না পারলে, ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে এর পরিবর্তে বারো রাকাত সালাত পড়ে নিতেন। যেমন হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে যদি সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন। (মুসলিম শরিফ : ১৬৪০)।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা রাতের (তাহাজ্জুদের) সালাতকে আবশ্যক করে নেবে। কেননা এটা হচ্ছে তোমাদের পূর্বেকার সৎলোকের নিয়ম। তোমাদের জন্য প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের পন্থা, গুনাহ মাফের উপায় এবং অপরাধ থেকে বাধাদানকারী। (তিরমিজি : ৩৫৪৯, ইবনে খুজাইমা : ১১৩৫)।

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ খুশি হন, ১. যে রাতে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করার জন্য ওঠে। ২. মুসল্লিরা যখন সালাতের জন্য কাতার বাঁধে। ৩. সৈন্যদল যখন শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধ হয়। (শরহুস সুন্নাহ, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১০৯, হাদিস নং-১১৫৭)।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজকে আবশ্যক করে নাও। কেননা এটা হচ্ছে তোমাদের পূর্বেকার সৎলোকের নিয়ম। তোমাদের জন্য প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের পন্থা, গুনাহ মাফের উপায়। (ইমাম তাবরানি : আল-মুজামুল আওসাত : ৩/৩১১)।

ফরজ সালাতের পর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সালাত হলো রাতের সালাত। শেষ রাতে আল্লাহতায়ালা নিকটবর্তী আসমানে এসে বান্দাদের আহ্বান করেন। তোমাদের মধ্যে কে আছ! গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনাকারী? কে আছ! রহমত তালাশকারী? তোমরা গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং রহমত চাও-এই বলে ঘোষণা দেন। তখনই মুত্তাকি, পরহেজগার, সুফি-সাধকরা সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আরাম ত্যাগ করেন নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন।

সালাতুত তাহাজ্জুদের ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ ইত্যাদি রাকাত আদায় করতে পারে। কেউ আরও বেশি আদায় করতে চাইলে করতে পারবে। যেহেতু এগুলো নফল সালাত এবং রাকাত সংখ্যাও নির্দিষ্ট নেই। তাই যে যত বেশি এ নফল সালাত আদায় করবে, সে তত বেশি সাওয়াব পাবে এবং কল্যাণ লাভ করতে পারবে। (বাহারে শরিয়ত : খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৮, আবু নাইম, খুলইয়াতুল আউলিয়া : ৫/৬৫)।

মাহে রমজানে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার উদ্দেশ্যে রাতেরবেলায় জাগ্রত থেকে সালাতুল তাহাজ্জুদ আদায় করে, সালাতুত তাহাজ্জুদ কেয়ামতের ময়দানে ওই বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে সুপারিশ করবে। নামাজ বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি এই ব্যক্তিকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেয়নি। এ ব্যক্তি তোমার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে। সুতরাং, তার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল করুন, অতএব, সালাতুত তাহাজ্জুদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (তিরমিজি : আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/১০৮)।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম