Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মাতৃভাষা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

Icon

তানজিল হোসাইন

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মাতৃভাষা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

ভাষা মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। মানুষ মাতৃভাষায় যেভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, অন্য কোনো ভাষায় তা সম্ভব হয় না। সেজন্য প্রত্যেক জাতির কাছেই নিজ মাতৃভাষা অতুলনীয়। ইসলামেও মাতৃভাষার মহত্ত ও তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা ভাষা হলো আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। ভাষার মাধ্যমেই অন্যান্য সৃষ্টি থেকে মানুষকে আলাদা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মাতৃভাষাই আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। ভাষার সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, দয়াময় (আল্লাহ), শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃজন করেছেন মানুষ, তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা। (সূরা আর রহমান-১-৪)।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা বিভিন্ন রকম হওয়ার পেছনে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিদর্শন; যা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনাবলীর মাঝে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের ভিন্নতাও। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আর রুম-২২)। ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হলে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রণিধানযোগ্য। সেটি হলো আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সঠিক পথপ্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবি-রাসূলরা ছিলেন তাদের স্বজাতির মধ্য থেকেই এবং তাদের ওপর অবতীর্ণ কিতাবগুলোও ছিল স্বজাতির মাতৃভাষায়, যাতে লোকরা তা সহজেই বুঝতে ও হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। এ বিষয়টা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এভাবে উপস্থাপন করেছেন, আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। তারপর আল্লাহ যাকে চান, তাকে পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে যান হেদায়াত দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা ইবরাহিম-৪৬)।

আল কুরআনের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, এরপর আমি (আল্লাহতায়ালা) একে (কুরআনকে) আপনার মাতৃভাষার সহজ করে দিয়েছি, যাতে মুত্তাকিদের সুসংবাদ দিতে পারেন এবং এর সাহায্যে কলহে লিপ্ত জাতিকে (জাহান্নামের) ভয় দেখাতে পারেন। (মারইয়াম-৯৭)। অন্য আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, আর এভাবেই আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় আপনার নিকট অহি করে পাঠিয়েছি, যাতে আপনি জনপদগুলোর কেন্দ্র (মক্কানগরী) ও তার আশপাশের অধিবাসীদের সতর্ক করে দাও এবং একত্রিত হওয়ার দিন সম্পর্কে ভয় দেখাও, যার আগমনে কোনো সন্দেহ নেই। এক দলকে জান্নাতে যেতে হবে এবং অপর দলকে যেতে হবে জাহান্নামে। (সূরা শূরা-৭)।

কুরআনে এ রকম অসংখ্য জায়গায় বিষয়টি বারবার বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত আরব জাতির মাতৃভাষা ছিল আরবি, সেজন্য আল-কুরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়, যাতে করে আরববাসীরা খুব সহজেই আল্লাহর নির্দেশনাবলী হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। এমনিভাবে ইসা (আ.)-এর জাতির মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, তাই সুরিয়ানি ভাষায় তার প্রতি ‘ইঞ্জিল’ অবতীর্ণ করা হয়। মুসা (আ.)-এর জাতির মাতৃভাষা ছিল ইবরানি, তাই ‘তাওরাত’ নাজিল করা হয় ইবরানি ভাষায়। একইভাবে দাউদ (আ.)-এর জাতির ভাষা ছিল ইউনানি, তাই সে ভাষাতেই আসমানি কিতাব ‘যাবুর’ নাজিল করা হয়। এভাবেই প্রত্যেক নবি- রাসূলদের কাছে তাদের স্বজাতির মাতৃভাষাতেই কিতাব নাজিল করা হয়।

মাতৃভাষার বিশুদ্ধ ব্যবহার রাসূল (সা.)-এর অনুপম সুন্নত। যেসব বৈশিষ্ট্য মানুষের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলে তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা অন্যতম। আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর জাতির মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী ছিলেন। তিনি সবচেয়ে প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন। স্বয়ং রাসূল (সা.) এ বিষয়ে বলেন, আমি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী।

আমরা জানি, মুসা (আ.) আল্লাহ দ্রোহী ফেরআউনের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে আদিষ্ট হলে, তিনি তার মুখের জড়তার কথা আল্লাহতায়ালার কাছে তুলে ধরেন এবং দাওয়াতকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে স্বীয় ভাই হারুন (আ.)কে দাওয়াতি কাজের সহযোগী হিসাবে পাওয়ার জন্য রবের কাছে দোয়া করেন। কারণ, হারুন (আ.) ছিলেন অধিক স্পষ্ট ও শুদ্ধভাষী।

ইসলামে মাতৃভাষার মহত্ত ও তাৎপর্য কেমন, তা ওপরের সামান্য আলোচনা থেকেই অনুধাবন করা যায়। এজন্য আমাদের কর্তব্য হলো, জীবনের সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা ও যথার্থ ব্যবহার করা। পাশাপাশি মাতৃভাষাতে ইসলামের বিষয়াবলী বই কিংবা বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে আম মানুষের জন্য ইসলামকে হৃদয়ঙ্গম সহজতর করা। এটাই সময়ের দাবি।

পরিশেষে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মাতৃভাষার ভিন্নতা নিয়ে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা, অহংকার এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করা যাবে না। ইসলাম প্রত্যেক ভাষা এবং বর্ণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে শেখায়। ভাষা কিংবা রঙের ভিন্নতার কারণে কাউকে অধিক মর্যাদা দেওয়া কিংবা কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। ইসলাম বলে, মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে। যার তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) যত বেশি, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা তত বেশি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম